কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ জরুরি প্রসূতি ও নবজাতক সেবা (CEmONC) চালু করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। এ উদ্যোগ টেকনাফ উপজেলায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ও আশপাশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবায় এক ঐতিহাসিক অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত হলো।
নতুন সেবা সংযুক্তির মাধ্যমে টেকনাফের লেদা এলাকায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২৪-এ আইওএম পরিচালিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র (PHC) এখন একটি পূর্ণাঙ্গ ফিল্ড হাসপাতালের মতো দ্বিতীয় পর্যায়ের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। এখানে আধুনিক অপারেশন থিয়েটার, প্রসূতি ও অ্যানেসথেশিয়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ-ব্যাকআপসহ রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থা এবং জরুরি চিকিৎসার জন্য সুস্পষ্ট প্রটোকল রয়েছে।
এই কেন্দ্র থেকে এখন নিরাপদ প্রসব, জরুরি সার্জারি, চিকিৎসা ও জীবনরক্ষাকারী রক্ত সরবরাহ সেবা দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে দিনের বেলা এই সেবা দেওয়া হলেও ধাপে ধাপে তা ২৪ ঘণ্টা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নবায়িত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল সিনিয়র FCV অ্যাডভাইজার জাভিয়ের ডেভিক্টর এবং আইওএম বাংলাদেশ প্রধান ল্যান্স বোনো।
৩ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি এবং ১ লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাসকারী টেকনাফ উপজেলায় জরুরি চিকিৎসাসেবা দীর্ঘদিন ধরেই সীমিত ছিল। শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি ১ লাখ জীবিত জন্মে ১৬১, যা জাতীয় এসডিজি লক্ষ্যমানের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বেশি। পূর্বে জরুরি প্রসূতি ও নবজাতক সেবার অভাবে অনেক মা ও শিশুর জীবন প্রতিরোধযোগ্য জটিলতায় হারিয়ে যেত।
এই জীবনরক্ষাকারী সেবা চালু হওয়া টেকনাফের স্বাস্থ্য খাতের জন্য একটি মোড় পরিবর্তনকারী মুহূর্ত, বলেন আইওএম বাংলাদেশের প্রধান ল্যান্স বোনো। প্রথমবারের মতো এখানে মা ও নবজাতকরা এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জরুরি চিকিৎসা পাচ্ছেন যা মৃত্যু রোধ করতে পারে। এটি হাজারো পরিবারে স্বস্তি ও আশা নিয়ে আসবে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী- উভয়ের জন্যই জরুরি, জীবনরক্ষাকারী সেবার সুযোগ তৈরি করে আইওএম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য ঘাটতি পূরণ করছে।
এই সেবার প্রয়োজনীয়তা বারবার কমিউনিটি সদস্যরা স্বাস্থ্য সমন্বয় সভায় তুলে ধরেছিলেন। আইওএমের এই পদক্ষেপ তাদের প্রয়োজনের প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে। এ উদ্যোগ বিশ্বব্যাংকের সহায়তা এবং কক্সবাজার সিভিল সার্জনের অফিস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও অন্য অংশীদারদের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হয়েছে।
এটি আইওএমের ২০২৫-২৭ স্বাস্থ্য কৌশলের অংশ, যেখানে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন এবং বাংলাদেশের স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।