ভয়াবহ দাবানলে গত পাঁচদিন ধরে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস শহর। শত চেষ্টার পরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না আগুন। পুড়ে ছারখার হচ্ছে এলাকার পর এলাকা। অনুমান করা হচ্ছে, আগুনে এখন পর্যন্ত দেড় শ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দাবানলে সবচেয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতি। আগুনে মানুষের প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে।
লস অ্যাঞ্জেলেসে আগুনের সূত্রপাত হয় গত মঙ্গলবার। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পাঁচটি স্থানে দাবানল সক্রিয়ভাবে জ্বলছিল। এর মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের পশ্চিম দিকে সান্তা মনিকা ও মালিবু এলাকার মাঝে এবং পূর্ব দিকে পাসাডেনা এলাকার কাছের দাবানল দুটি সবচেয়ে বেশি ধ্বংসের কারণ হয়েছে। এই দুই দাবানলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ৩৪ হাজার একর জায়গার গাছপালা, ঘরবাড়িসহ সবকিছু।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া হিসাবে, আগুনে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। এর মধ্যে সান্তা মনিকা ও মালিবু এলাকার মাঝে দাবানলে পুড়েছে ৫ হাজার ৩০০ স্থাপনা। পাসাডেনা এলাকার কাছের দাবানলে পুড়েছে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার স্থাপনা। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে এই ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ইতিহাসে ভয়াবহতম এই আগুনে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের ক্ষতি হয়েছিল বলে গত বুধবার জানিয়েছিল আবহাওয়াবিষয়ক তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদার। এক দিন পরই তা বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। ওয়েবসাইটটির শুক্রবারের তথ্য অনুযায়ী, আগুনে এখন পর্যন্ত ১৩৫ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
আগুন নেভাতে জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন দমকল বাহিনীর কর্মীরা। টানা কাজের কারণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবুও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিজাত প্যাসিফিক প্যালিসেডস এলাকায় পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া বাড়ি-ঘরগুলোতে লোকজনকে ফিরতে দেখা গেছে। অনেকে পোড়া বাড়িঘর দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বিপদের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাড়িঘরে চলছে লুটপাট। ইতোমধ্যে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্যাসিফিক প্যালিসেডস ও ইটনসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। ন্যাশনাল গার্ডও মোতায়েন করা হয়েছে।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর লস অ্যাঞ্জেলসে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অন্যদিকে তীব্র তুষারপাতে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের অঙ্গরাজ্যগুলো। শুক্রবার টেক্সাস, ওকলাহোমা, নর্থ ক্যারোলিনা ও জর্জিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বাতিল হয়ে যায় স্কুলের কার্যক্রম। লাখ লাখ শিশুকে ঘরে বসেই অনলাইনে ক্লাস করতে হচ্ছে। বিভিন্ন অঞ্চলের অফিস আদালতও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে শার্লোট, ডালাস-ফোর্ট বিমানবন্দরে বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।