চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিশেষ পরিচিতি রয়েছে একটি গ্রামের। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে পর্যটকরা গেলে পাহাড়ে উঠতে যে লাঠির দরকার হয়, তার জোগান দেয় গ্রামের পরিবারগুলো। প্রথম দিকে অনেকে এটি শখের বশে করলেও এখন লাঠি তৈরি করেই সংসারে সচ্ছলতা এসেছে এসব পরিবারে।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে ভূঁইয়াপাড়া গ্রামে প্রত্যেক বাড়ির উঠানে বসে লাঠি তৈরির বিভিন্ন ধাপের কাজ করছেন পরিবারের সদস্যরা। ৬ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বাঁশের লাঠি না হলে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ১৩৫০ ফুট ওপরে ওঠা পর্যটক ও তীর্থ যাত্রীদের জন্য কষ্টকর। এজন্য এসব লাঠির বেশিরভাগই জোগান দেন এই গ্রামের নারীরা। এসব লাঠি বিক্রি করেই অনেকের সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮ সালের দিকে ইপসা ইকোট্যুরিজম প্রজেক্টের আওতায় পরিবেশবান্ধব পর্যটনশিল্প বিকাশে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছিল। স্থানীয়দের বিভিন্ন সার্ভিস চালুর ব্যাপারে বিভিন্ন কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছিল ইপসা। প্রথম দিকে চট্টগ্রামের বাইরে থেকেই লাঠি সংগ্রহ করে স্থানীয়রা বিক্রি করতেন। সেসময় কর্মশালায় অংশ নিয়ে লাঠি তৈরির প্রক্রিয়াটি একটি নতুন উদ্ভাবনী ব্যবসা হিসেবে নেন গ্রামের নারীরা।
ভূঁইয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পেয়ারা বেগম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রথম দিকে পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা লম্বা বাঁশকে ৬ ফুট দৈর্ঘ্যের সাইজ করে কেটে পর্যটকের কাছে বিক্রি করতাম। আবার এই লাঠি অনেকেই ভাড়ায় নিতো। কিন্তু দেখা গেছে, যে লাঠিটি ডিজাইন করা সেই লাঠি পর্যটকরা বেশি কেনেন। সেই চিন্তা থেকে আমরা বাড়িতে লাঠির ওপর ডিজাইন করার চিন্তা করলাম। যে বাঁশের লাঠি ২০ টাকা বিক্রি করেছি, সেই লাঠির গায়ের ওপর সর্পিলাকৃতির ডিজাইন করে দাম পাওয়া যায় ৬০ টাকা।
নবম শ্রেণির ছাত্রী সাবরিনা এই গ্রামেরই মেয়ে। তার পড়াশোনার খরচ আসে লাঠির ওপর ডিজাইন করে আয় থেকে। সে জানায়, বাঁশ সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপে একটি ডিজাইনের লাঠি তৈরিতে ২০ টাকা খরচ পড়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন ৬০টি লাঠি প্রস্তুত করতে পারে সে।
একই গ্রামের নারী উদ্যোক্তা পারভীন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এই গ্রামের প্রত্যেক ঘরে ঘরে লাঠি তৈরির কাজ করা হয়। আমরাই এসব কাজ করি। আমাদের তৈরি ডিজাইনের লাঠিগুলো অনেক শক্ত ও মসৃণ হয়।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে পর্যটকদের কাছে নিয়মিত লাঠি বিক্রি ও ভাড়া দেন তানভীর। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি লাঠি সর্বোচ্চ ৬০ টাকা দরে বিক্রি করেন। তবে কেউ চাইলে লাঠিগুলো ২০ টাকা দিয়ে ভাড়া নিতে পারেন।
ইপসার প্রোগ্রাম অফিসার সাদিয়া তাজিন বলেন, পাহাড়ে ওঠার বিশেষ লাঠি তৈরি নতুন করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে। নভেম্বর মাস এলেই প্রত্যেক ঘরে ঘরে লাঠি তৈরির ধুম পড়ে যায়।
তিনি জানান, প্রতিবছর সীতাকুণ্ডের শিবচতুর্দশী ও দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে লাখ লাখ তীর্থযাত্রীর আগমন ঘটে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ১৩৫০ ফুট ওপরে চন্দ্রনাথ ধাম অবস্থিত। সেই ধামে উঠতেই এই লাঠির প্রয়োজন হয়। তখনই বিশেষ এই লাঠির চাহিদা বেড়ে যায়।
এম মাঈন উদ্দি/এসআর/জেআইএম