লোকবলের অভাবে পাঁচ হাসপাতালে পড়ে আছে ৪৪ আইসিইউ বেড

1 day ago 8

কোভিডকালে চরম সংকট দেখা দেওয়ায় বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ঋণে ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’র (ইআরপিপি) আওতায় ৯৪টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যার বরাদ্দ পায় রাজশাহী বিভাগ। তবে আইসিইউ চালাতে লোকবল সংকটে রাজশাহী ও বগুড়া ছাড়া বাকি জেলাগুলোর হাসপাতালগুলোতে ৪৪টি শয্যা অলস পড়ে আছে। এতে রোগীদের অতিরিক্ত চাপে সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছে এই দুই জেলার হাসপাতাল দুটি। পাশাপাশি সংকটাপন্ন রোগীও সিরিয়াল না পেয়ে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইআরপিপি প্রজেক্টের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের জন্য বরাদ্দ হওয়া ৯৪টি আইসিইউ-এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ৪০টি, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ১০টি, সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ১০টি, জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ১০টি, বগুড়ার সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ৮টি ও সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ৬টি দেওয়া হয়। তবে রামেক ও শজিমেক হাসপাতাল ছাড়া বাকিগুলোতে ফেলে রাখা হয়েছে আইসিইউ শয্যা। ফলে উত্তরাঞ্চলের এই জেলাগুলোর গুরুতর রোগীদের চাপ পড়ছে এই দুই হাসপাতালে। ফলে সংকটাপন্ন রোগীরা সিরিয়াল না পেয়ে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, রামেক হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা পেতে অপেক্ষা করছেন মায়ের চিকিৎসার জন্য নওগাঁ থেকে আসা রাশেদুল ইসলাম। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সকাল থেকে অপেক্ষা করেন তিনি। সিরিয়াল একটু এগোলেও এখনো শয্যা পাননি তিনি।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, অপেক্ষা ছাড়াতো আর কিছু করার নেই। অসুস্থ মাকে চিকিৎসকেরা আইসিইউতে নিতে বলেছেন। তার ব্রেইনে ভাইরাস। এখন তিনি অচেতন অবস্থায় আছেন। প্রতিদিন আসছি। সিরিয়াল কত দেখছি। এখন হয় কেউ মারা গেলে কিংবা কেউ সুস্থ হয়ে উঠলেই আমরা এখানে শয্যা পাবো।

একই অবস্থা সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মরিয়ম খাতুনের। তিনি তার বাবার জন্য খুঁজছেন আইসিইউ। তার সিরিয়াল ২৭। স্ট্রোক করে তারা বাবা এখন এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার প্রয়োজন আইসিইউ। এজন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে ২৬ জন পর্যন্ত।

লোকবলের অভাবে পাঁচ হাসপাতালে পড়ে আছে ৪৪ আইসিইউ বেড

তিনি বলেন, বাবাকে নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। সিরাজগঞ্জ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা নেই। তাই এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখানেও ফাঁকা নেই। অপেক্ষা করছি। প্রতিদিন কথা বলছি। কিন্তু সিরিয়ালতো অনেক। এখন দেখি কতদিনে পাওয়া যায়। যারা সিরিয়ালে আছেন সবার রোগীরই অবস্থা অনেক খারাপ। তাই কিছু করার নেই।

শুধু রাশেদুল ও মরিয়মই নন, তাদের মতো অসংখ্য রোগীর স্বজনরা রামেক হাসপাতালে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। একদিকে তারা আইসিইউয়ের একটি শয্যার জন্য লড়াই করছেন, অন্যদিকে বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে আইসিইউ পড়ে আছে।

এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) ইনচার্জ ডা. অবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, যতদিন পর্যন্ত জেলা হাসপাতালের আইসিইউ চালু না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের হাসপাতালে চাপ কমবে না। এটি ২০০ শয্যা করলেও চাপ কমবে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই অঞ্চলের জেলা হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ চালু করা দরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শিমুল তালুকদার বলেন, আমাদের যে আইসিইউ শয্যা দেওয়া হয়েছে এগুলোর অবকাঠামো ছিল না। এগুলো ৬ তলায় বসানো হয়েছে। তবে আইসিইউ পরিচালনার জন্য লোকবল নেই। এজন্য গুরুতর রোগীদের রাজশাহী কিংবা বগুড়ায় চলে যেতে বলি।

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ১০ শয্যার আইসিইউ পরিচালনার জন্য জনবল না থাকায় বন্ধ আছে। যেহেতু আইসিইউ নেই, তাই কিছু আইসিইউ শয্যা কার্ডিওলজি বিভাগে ব্যবহার করছি।

সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক মো. জাফরুল হোসেন বলেন, রাজশাহী বিভাগে মোট ৯৪টি বেড ও ভেন্টিলেশন পাওয়া যায়। তবে এগুলোর মোট ৫০টি চালু করা হয়েছে। বাকিগুলো মেশিনসহ সব আছে, জনবলের জন্য চালু করতে পারছি না।

বাংলাদেশ হাসপাতাল সার্ভিসের পরিচালক ডা. মইনুল আহসান বলেন, এই ইআরপিপি প্রজেক্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমরা এটি নতুন করে এক্সটেনশন করার চেষ্টা করছি। আর যদি এটি না বাড়ে তাহলে অন্য কোনো প্রজেক্টের সঙ্গে যোগ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এই আইসিইউ শয্যাগুলো ফেলে রাখা হবে না। প্রয়োজনীয় লোকবল ও অবকাঠামো নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এগুলোকে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এফএ/এমএস

Read Entire Article