দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে গিয়ে প্রতারিত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন। পরে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন দেশে। ২০১২ সালে শখের বশে শুরু করেন বিদেশি মুরগি পালন। এরপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি।
চার জোড়া বিদেশি মুরগি দিয়ে শুরু করা জাহাঙ্গীর হোসেনের বাণিজ্যিক খামারে এখন সেবরাইড, ব্রাহামা, পেনসিল লেগ, কোসামো, সোমাত্রা’র মতো প্রায় ৮০ প্রজাতির মুরগির পাশাপাশি রয়েছে ময়ূর, উটপাখি, গোল্ডেন ফ্রিজেন্ট, লেডিয়াম শায়ার, উড ডাক হাঁস, ম্যান্ডারিন হাঁস, সোয়ান, মরুভূমির চোকার প্যাট্ট্রিসের মতো দুর্লভ বিদেশি পাখি।
তার খামারের এক জোড়া মুরগি বা পাখি প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০ হাজার থেকে প্রায় এক লাখ টাকায়। খরচ-খরচা বাদ দিয়ে প্রতিমাসে জাহাঙ্গীরের আয় ৫০ হাজার থেকে প্রায় লাখ টাকা। খামারের এসব পাখি ও মুরগি বেশি বিক্রি হয় অনলাইনে।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়ার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদেশে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরে উন্নত রাষ্ট্রে যেতে অবৈধ পথে ভারত গিয়ে আটকা পড়েন। সেখান থেকে শৌখিন মুরগি পালনের চিন্তা মাথায় আসে। কিছু খামারে কয়েক মাস মুরগি পালনের বিষয় রপ্ত করে দেশে ফিরে ২০১২ সালে শৌখিনভাবে শুরু করেন বিদেশি মুরগি পালন।
বিদেশি এসব মুরগির চাহিদা দেখে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে মুরগি সংগ্রহ করে বাড়াতে থাকেন খামারের পরিসর। এখন তার খামারে ব্রাহামা, সিল্কি, সিবরা, সিলভার সেবরাইড, গোল্ডেন সেবরাইড, পলিস্কেব, সুলতান, প্যারটলিভ, ইউন্ডডট, সোমাত্রা, সিলভার লেস, কসমো, আছিল, ক্রেস্টেড পলিস্তেব, গোল্ডেন সেবরাইড, মল্টেড জাপানিজ, ব্লুবারলেজ, ব্লাকটেল, ইয়োকামাহাসহ ৭০-৮০ প্রজাতির রং-বেরঙের ও বাহারি জাতের পাঁচ শতাধিক মুরগি রয়েছে। আরও রয়েছে ময়ূর, উটপাখি, গোল্ডেন ফ্রিজেন্ট, সিলভার ফ্রিজেন্ট, লেডিয়াম শায়ার, উডডাক হাঁস, ম্যান্ডারিন হাঁস, সোয়ান, মরুভূমির চোকার প্যাট্ট্রিসের (কোয়েল) মতো দুর্লভ ও বিরল বিদেশি পাখি।
স্থানীয় জসিম মোল্লা বলেন, ‘জাহাঙ্গীরের আগে কিছুই ছিলে না। এখন খামার করে তিনি সাবলম্বী। প্রবাসীরাও তার সঙ্গে পেরে উঠছে না। শখের বশে আমিও এক জোড়া মুরগি কিনতে এসেছি।’
খামারি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এসব পাখি ও মুরগির অনেক চাহিদা রয়েছে, যা আমার দ্বারা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এগুলো বেশিরভাগই অনলাইনে বিক্রি হয়ে যায়। এছাড়া জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শৌখিন খামারি ও তরুণ উদ্যোক্তরা এসে এগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যান।
তিনি আরও জানান, জাত ও বয়সভেদে এসব পাখি ও মুরগির দাম নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে তার খামারের এক জোড়া মুরগি ও পাখি ২০ হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।
রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, এসব শৌখিন মুরগি বা পাখির মূল্য সাধারণ মুরগি বা পাখির মতো না। জাহাঙ্গীরের মতো খামারিদের প্রাণিসম্পদ দপ্তর পরামর্শ, চিকিৎসাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে।
রুবেলুর রহমান/এসআর/এএসএম