ওয়াশিংটন ডিসিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সমর্থক ও বিরোধী মিলেয়ে প্রায় দুই লাখ লোকের উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া এবার শপথ অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য ভেঙে বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের ঐহিত্য অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের অভিষেক একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সাধারণত মার্কিন কর্মকর্তা, দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টদের উপস্থিতিতে ক্যাপিটল ভবনের সিঁড়িতে স্থাপিত খোলা মঞ্চে শপথ নেন। আশপাশের খোলা জায়গা থেকে উপস্থিত জনতা এই অনুষ্ঠান সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন।
কিন্তু এবারের শপথ অনুষ্ঠানে ঐতিহ্য ভাঙতে চলেছেন ট্রাম্প। এই অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর ফলে অনুষ্ঠানটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় থেকে আন্তর্জাতিক বিষয়ে রুপান্তরিত হয়েছে।
আরও পড়ুন:
- ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ আজ
- প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দিনেই নির্বাহী আদেশের ঝড় তুলবেন ট্রাম্প
- প্রথম দিনেই অভিবাসীদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করবেন ট্রাম্
জানা গেছে, প্রায় এক ডজন বিদেশি নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ট্রাম্প। তাদের অধিকাংশই রক্ষণশীল ও ডানপন্থি। এর আগে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর শুধু রাষ্ট্রদূত অথবা পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন।
এদিকে, ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন না তার ‘বন্ধু’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার বদলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্কর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে:
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং: রাজনীতি ও অর্থীনীতে প্রতিপক্ষ হলেও চীনা প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু শি’র প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হান জং।
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হ্যাভিয়ার মিলি: আর্জেন্টিনার এই ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি: শিডিউল মিললে ইতালির চরম ডানপন্থি দল ব্রাদার্স অব ইতালির নেতা মেলোনি ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে তার দপ্তর।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর অরবান: দেশটির জনপ্রিয়তাবাদী নেতা অরবান ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তিনি ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারছেন না।
একুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া: নোবোয়া ট্রাম্পের জয়কে লাতিন আমেরিকার বিজয় বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি তার পুনর্নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ রেখে ওয়াশিংটনে উপস্থিত হচ্ছেন।
এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে: শপথ অনুষ্ঠোনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের বন্ধু বুকেলেকে। তবে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ২০২৪ সালে এল সালভাদরে বুকেলের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জুনিয়র ট্রাম্প।
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো: ‘ক্রান্তীয় অঞ্চলের ট্রাম্প’ নামে পরিচিত চরম ডানপন্থি বোলসোনারো আমন্ত্রণ পেলেও শাস্তিমূলক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারবেন না।
পোল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাতেউশ মোরাভিয়েছকি: সম্প্রতি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ডানপন্থি ইউরোপিয়ান কনজারভেটিভস ও রিফর্মিস্টস পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়া মোরাভিয়েছকি ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
যাদের আমন্ত্রণ পাননি:
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছে তার দপ্তর। তবে দেশটির চরম ডানপন্থি নেতা নাইজেল ফ্যারাজকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ও তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ: ট্রাম্প ও ম্যাক্রোঁর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকালেও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে ফ্রান্সের রিকনকুয়েস্ট পার্টির চরম ডানপন্থি নেতা এরিক জেমুরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আর তিনি অনুষ্ঠানে থাকছেন।
আরও পড়ুন:
- যেভাবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
- ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ, বিশ্বে এর প্রভাব কেমন হতে পারে?
- ট্রাম্পের নামে ক্রিপ্টোকারেন্সি, দাম আকাশছোঁয়া
জার্মানির প্রেসিডেন্ট ওলাফ শলৎজ: ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বৃহত্তম অর্থনীতির প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তার বদলে দেশটির চরম ডানপন্থি দল আল্টারনেটিভ ফর জার্মানি পার্টির (এএফডি) নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ফর ডার লিয়েন: লিয়েনের মতো ইউরোপী ইউনিয়নের ও নেটোভুক্ত দেশগুলোর অধিকাংশ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
সূত্র: সিএনএন
এসএএইচ