শয্যা বাড়লেও বাড়েনি স্বাস্থ্যসেবা

3 hours ago 5

শয্যা বাড়লেও স্বাস্থ্যসেবা বাড়েনি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। চিকিৎসক সংকট, যন্ত্র বিকল ও নানা অনিয়মে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৬১ সালে ১০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু হয়। এরপর ৩১ শয্যা ও পরে ২০১৮ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। হাসপাতালে শয্যা বাড়ানো ও ভবন নির্মাণ করা হলেও জনবল নিয়োগ হয়নি। ফলে উপজেলার এক লাখ ২৪ হাজার ৭৪টি পরিবারের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের রাজু সেখ বলেন, আমার স্ত্রী তানিয়া খাতুন (২২) বেশ কিছুদিন ধরে পেটের ব্যথায় ভুগছেন। তার শরীর ফুলে যাচ্ছে। এছাড়া মাথা ঘুরে একবার পড়েও গিয়েছিলেন। এজন্য সকাল ৯টার দিকে কম খরচে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছি। একজন চিকিৎসক এক্স-রে ও আলট্রাসনোসহ রক্তের নানা পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন নষ্ট ও লোক না থাকায় আলট্রাসনো পরীক্ষা এখানে করা সম্ভব না। তাই এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছেড়ে উপজেলার বেসরকারি একটি হাসপাতালে যাবো।

আকলিমা খাতুন নামের আরেক রোগী বলেন, লোকমুখে শুনি হাসপাতাল আগের চেয়ে বড় হয়েছে। সেজন্য হাসপাতালে প্রথম এলাম। কিন্তু এসে দেখি আগের চেয়েও খারাপ। এসেছিলাম ডাক্তার দেখাইতে। কিন্তু তারা হাতে তিনটা স্যালাইন আর জ্বরের ওষুধ দিয়ে বিদায় করেছে।

চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় শেফালী বেগম জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালে এক্স-রে ও আলট্রাসনো মেশিন থাকলেও বাইরের বিভিন্ন ক্লিনিকে পরীক্ষা করাতে হয়। এতে অনেক বেশি টাকা লাগে। এটি নামে সরকারি হাসপাতাল, কাজের বেলাই কিছুই না।

হাসপাতালে কতজন রোগী ভর্তি রয়েছে এমন জবাবে সিনিয়র স্টাফ নার্স সূর্য খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, পুরুষ, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে ৩১ জন রোগী ভর্তি ছিল। এরমধ্যে সকালে রিলিজ নিয়ে চলে গেছেন ১৩ জন। আর নতুন করে ভর্তি হয়েছে আরও ৮ জন রোগী। তবে এসব ওয়ার্ড ঘুরে পাওয়া গেছে ভিন্ন চিত্র। পুরুষ ওয়ার্ডে ৭ জন মহিলা ওয়ার্ডে রয়েছে মাত্র ছয়জন রোগী। এসব রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তারা সেবা নিতে এসে বিপাকে পড়েছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে যেতে হয় বাইরে। এতে তাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

শয্যা বাড়লেও বাড়েনি স্বাস্থ্যসেবা

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শারমীন আলম হাসপাতালে নেই। কোনো চিকিৎসক আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না শর্তে এক নার্স বলেন। জরুরি বিভাগে একজন চিকিৎসক থাকতে পারে। যাওয়া হয় জরুরি বিভাগে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় আমিনুর রহমান নামের এক চিকিৎসক একজন বয়স্ক রোগীকে রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে রেখে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে গালগল্পে মেতে উঠেছেন। পরে সাংবাদিক পরিচয়ে হাসপাতালের সেবার বিষয় জানতে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কিছুই জানেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

পরে মুঠোফোনে কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শারমীন আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি একটু বাইরে রয়েছি, প্রয়োজন হলে দুই ঘণ্টা পর যোগাযোগ করুন। পরে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও প্রশাসনিক অনুমোদন হয়নি। তাই আমাদের ৩১ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্টাফ দিয়ে রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। এতেও ১৪ জন চিকিৎসকের বিপরীতে মাত্র রয়েছে ৭ জন।
তিনি বলেন, এক্স-রে মেশিন তিনদিন ধরে নষ্ট। আর দুই মাস ধরে লোক না থাকায় আলট্রাসনো মেশিনও বন্ধ। এসব বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. নুরুল আমীন জাগো নিউজকে বলেন, ওই হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। চিকিৎসকের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকসহ অন্য শূন্য পদগুলো পূরণ হলে এ সমস্যা দূর হবে।

এম এ মালেক/আরএইচ/জিকেএস

Read Entire Article