বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে একসময় দ্রুত আমানত বৃদ্ধির জন্য শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো ছিল বিশেষভাবে আলোচিত। প্রচলিত ব্যাংকের তুলনায় এগুলোর প্রবৃদ্ধি ছিল ধারাবাহিক ও উল্লেখযোগ্য। তবে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রকাশ্যে আসায় সেই প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরণের ভাটা পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ২০২৫ সালের জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা- যা প্রায় ৯ দশমিক ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।
কিন্তু একই সময়ে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে প্রবৃদ্ধি ছিল তুলনামূলকভাবে কম। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে এ খাতে আমানত ছিল ৪ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ-যা প্রচলিত ব্যাংকের চেয়ে অনেক ধীর।
২০২৪ সালের আগস্টে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংক খাতে একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর মধ্যে ১৫টি ব্যাংকের পর্ষদ বিলুপ্তি, এস আলম গ্রুপকে ব্যাংক খাত থেকে অপসারণ, ৫২ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা এবং পাঁচটি দুর্বল ব্যাংকের একীভূতকরণ অন্তর্ভুক্ত। এসব পদক্ষেপ প্রচলিত ব্যাংকের আমানত বাড়াতে সহায়ক হলেও ইসলামী ব্যাংকগুলো তেমন সুফল পায়নি।
একসময় দেশের মোট আমানতের এক-চতুর্থাংশই ছিল ইসলামী ব্যাংকগুলোতে। কিন্তু ২০২৫ সালের জুলাইয়ে এ হার নেমে এসেছে ২২ শতাংশের ঘরে।
খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৈরি হওয়া অস্থিরতা এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক অনিয়মের কারণে আমানতকারীদের আস্থা নড়বড়ে হয়ে যায়। ফলে অনেকে এসব ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন, আর প্রচলিত ব্যাংকের আমানত তুলনামূলকভাবে বাড়ে।
- আরও পড়ুন:
তিন দিন বন্ধ থাকবে মিডল্যান্ড ব্যাংকের কার্যক্রম
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ৫৪ গ্রাহকের টাকা উধাও
বর্তমানে দেশে পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে ১০টি- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।
গত সরকারের সময়ে শাহ্জালাল ইসলামী ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ছাড়া বেশিরভাগ ইসলামী ব্যাংকে অনিয়ম ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে পাঁচটি ব্যাংক ইতিমধ্যেই একীভূত হয়েছে। তবে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মে থেকে জুন মাসে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছিল ৮ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। কিন্তু জুন থেকে জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি সীমিত হয়ে দাঁড়ায় মাত্র ৮৫৮ কোটি টাকা। এতে স্পষ্ট হচ্ছে, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের আমানত বৃদ্ধির ধারা ক্রমেই মন্থর হয়ে যাচ্ছে।
ইএআর/এনএইচআর