শরীয়তপুরের নড়িয়ায় দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ৫টি বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের বিলদেওয়ানিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছে।
আহতরা হলেন বিলদেওয়ানিয়া এলাকার জাবেদআলী মাদবরের ছেলে রমজান মাদবর (৪০), আসমত আলী মুন্সীর ছেলে ফয়সাল মুন্সী (১৮), রিপন মাদবরের স্ত্রী হালিমা আক্তার (৩৫), মৃত রুহুল আমিন মাদবরের স্ত্রী দিনা বেগম (৫৫), আবু আলেম মাদবরের স্ত্রী সুইটি বেগম (৩৭), মেয়ে ঘুমাইয়া আক্তার (১৮), তাবাসসুম (১১)।
এরমধ্যে আহত রমজান ও ফয়সালকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু আলেম মাদবরের সঙ্গে প্রতিবেশী শাহ আলম ফরাজির দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে দুপক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান আবু আলেম মাদবর ও ইকবাল মাদবরের বাড়িতে হামলা চালায় শাহ আলম ফরাজির লোকজন। পরে তাদের ঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালিয়ে লুটপাট করা হয়। পরে গোলাম হোসেন রনি, খোকন মাদবর ও শাহ আলম ফরাজির বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এ সময় অন্তত সাতজন আহত হয়েছে। আহতরা চেয়ারম্যান আবু আলেম মাদবরের লোকজন।
চেয়ারম্যান আবু আলেম মাদবরের স্ত্রী সুইটি বেগম বলেন, রোববার (৩০ মার্চ) রাতে শাহ আলম ফরাজির লোক বাবু ফরাজি আমাদের বাড়ির ঘাটায় বোম ফাটায়। এ ছাড়া আমাদের বাড়ির পানির পাইপ কেটে দেয়। পরে সোমবার ঈদের নামাজ পরে শাহ আলম ফরাজির নেতৃত্বে ইব্রাহিম ফরাজি, শহজাহান ফরাজি, লোকমান ফরাজি, আসমত ফরাজি, জলিল মাদবরসহ ৮০-৯০ জন লোক আমাদের বাড়িতে এসে ঘরে ঢুকে ঘরের সব আসবাবপত্র, ফ্রিজ, টিভি ভাংচুর করছে। নগদ টাকা ও ১২ থেকে ১৩ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া আমাদের লোক ইকবাল মাদবরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অন্যদিকে গোলাম হোসেন রনি, খোকন মাদবরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। আমদের লোকজন কারও বাড়িতে হামলা চালায়নি। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এ হামলার সঠিক বিচার দাবি করছি।
এদিকে শাহ আলম ফরাজির স্ত্রী ডলি আক্তার বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমরা বাড়িতে খিচুড়ির আয়োজন করি। তাই খিচুড়ি খেতে আত্মীয়-স্বজনরা আমাদের বাড়িতে আসে। পরে আমাদের ছেলেরা বাড়ির ঘাটায় ঈদ উপলক্ষে একটি চকলেট বোম ফোটায়। এ বিষয় নিয়ে চেয়ারম্যান আবু আলেম মাদবর ও তার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে জুনায়েদের কবর ভাঙচুর করে এবং আমাদের দুইটি ঘর ভাঙচুর করা হয়। পরে আমাদের লোকজন তাদের বাড়িতে হামলা করে।
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন মোল্লা বলেন, চেয়ারম্যান আবু আলেম মাদবরের সঙ্গে শাহ আলম ফরাজির দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। ঈদের দিন দুপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। যেহেতু রিমোট এলাকা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এঘটনায় এখনও কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রাজধানীর মিরপুরে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের বিলদেওয়ানিয়া এলাকার শাহ আলম ফরাজির ছেলে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার কম্পিউটারসামগ্রী বিক্রির দোকানের শ্রমিক জুনায়েদ ফরাজি। জুনায়েদ নিহতের ঘটনায় মামলার আসামী করা হয় শরীয়তপুরের রাজনগর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আবু আলেম মাদবর, তাঁর আপন ভাই আলমগীর মাদবর, চাচাতো ভাই ইকবাল মাদবর, কামাল মাদবর ও সোহেল মাদবরসহ অনেককে।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান আবু আলেম মাদবর কালবেলাকে বলেন, যেদিন জুনায়েদ মিরপুরে মৃত্যু বরণ করেন সেই সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। সেইদিন আবার ছয়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে একটি দরবার সালিশেও ছিলাম। পরে শুনি আমিসহ আমার পাঁচ ভাই মামলার আসামি। মামলাটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছিল। যার কোনো সত্যতা নেই। এখন আবার ঈদের দিন শাহ আলম ফরাজি জাজিরার থেকে লোকজন এনে খিচুড়ি খাইয়ে পরিকল্পিতভাবে আমাদের বাড়িতে হামলা করে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। আমাদের ৭ জনকে পিটিয়ে কুপিয়ে আহত করে।