শর্তে আটকে পড়ে আছে ২১ কোটি টাকার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র

2 weeks ago 7

নির্মাণের পর থেকে অব্যবহৃত পড়ে আছে ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভৈরব মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। কেন্দ্রটির কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় কোনো কাজে আসছে না এটি। নির্মাণের চার বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যবসায়ীরা না আসায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকার যে শর্ত দিয়েছে তা মেনে ব্যবসা করা সম্ভব না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পুরাতন মেঘনা ফেরিঘাটে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ২০ কোটি ৭৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে চারতলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি নির্মাণ করে মৎস্য অধিদপ্তর। ২০১৮ সালে নির্মাণকাজ শুরু করে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। অবতরণ কেন্দ্রটি ২৭ শতাংশ ভূমির ওপর নির্মিত। ভবনের চতুর্দিকে সীমানা প্রাচীর, অকশন শেড, প্যাকিং শেড, ৩৫টি আড়ত ঘর, ১টি আইসপ্লান্ট, সোলার প্যানেল, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, গভীর নলকূপ, আইস ক্রাসার ও জেনারেটর ব্যবস্থাসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু নির্মাণের প্রায় চার বছর অতিবাহিত হলেও এখনো কোনো ব্যবসায়ী অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবসা করতে আসেননি।

কাগজে কলমে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে একজন ব্যবস্থাপকের নাম থাকলেও সরেজমিনে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সেখানে একজন ল্যাব কন্ট্রোলার ও একজন নাইটগার্ড দায়িত্ব পালন করছেন।

ভৈরব নৈশ মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী আবু হানিফ জানান, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবসা করতে হলে ২ লাখ টাকা অগ্রিম, মাসে ২ হাজার টাকা করে ভাড়া ও বিক্রিত মাছের শতকরা দেড় টাকা কমিশন দিতে হবে সরকারকে। এসব শর্তে ব্যবসা করলে তাদের আর্থিক ক্ষতি হবে। ব্যবসা টেকানো যাবে না। তাছাড়া অবতরণ কেন্দ্রে মাছ রাখা বা প্রসেসিং করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা (মাঠ) নেই।

শর্তে আটকে পড়ে আছে ২১ কোটি টাকার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র

আরেক মৎস্য ব্যবসায়ী বাবু মানিক বলেন, বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় সরাসরি হাওর-বাওড় বা নদীর মাছ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে। তাই ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। পুরাতন নৈশ মৎস্য আড়তে নিজেদের ভিটেয় ৩০-৩৫ বছর যাবত ব্যবসা করায় কোনো ভাড়া লাগে না এবং এখানকার সরবরাহকৃত মাছ বিদেশে কিছুটা রপ্তানি করায় কোনো রকমে আড়তদাররা টিকে আছে।

আরও পড়ুন-

ভৈরব মৎস্য আড়তদার মালিক সমবায় সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন বলেন, সরকার যে শর্ত দিয়েছে এসব শর্ত মেনে অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব না। তাছাড়া এখন আগের মতো আড়তে মাছ আমদানি না হওয়ায় নিজস্ব ভিটেয় কোনো রকমে ব্যবসা করে আমরা টিকে আছি। তাই কোনো আড়তদার সেখানে গিয়ে ব্যবসা করতে আগ্রহী নয়।

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বিষয়ে কথা বলতে ভৈরব মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপকের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি জানান, আগে তিনি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন। এখন অন্যত্র বদলি হয়েছেন। তবে সেখানে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

ভৈরব উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয় বণিক জানান, ভৈরব উপজেলায় একটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র রয়েছে। এটি ৩-৪ বছর আগে নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় পুলতাকান্দা মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ীদের এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে স্থানান্তরের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। যাতে ব্যবসায়ীরা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ভোক্তাদের কাছে মিঠাপানির মাছ পৌঁছে দিতে পারেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা স্থানান্তর হননি। তারা বলছেন, সেখানে স্থান সংকুলান। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ৩৫টির মতো আড়ত বসার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ভৈরবে ১৫০টি মৎস্য আড়ত রয়েছে। এসব কারণেই তারা স্থানান্তর হননি।

তিনি আরও বলেন, এক বছর আগে স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে একাধিক মিটিং হয়েছে। তবুও এর কোনো সমাধান হয়নি। আপনারা জানেন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি বিএফডিসি থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে। তারা যদি ভবিষ্যতে কোনো নির্দেশনা দেন তাহলে সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করবো।

এফএ/এমএস

Read Entire Article