শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিতর্ক, অর্থপাচার বিরোধী অভিযানে চাপ

3 hours ago 3

বাংলাদেশের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধান শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে সম্প্রতি একাধিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থপাচার, অবৈধ সম্পদ শনাক্তকরণ এবং পুনরুদ্ধার অভিযানে সফলতার কারণে তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে একটি পক্ষ। যারা শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু বিতর্কিত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বিএফআইইউ ও তাকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএফআইইউ প্রধানকে বিতর্কিত করার মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ শনাক্ত ও ফিরিয়ে আনার গতিকে স্থির করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে আর্থিক খাত সংস্কারের জড়িত অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যেও আতঙ্ক তৈরি হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।

তথ্য বলছে, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ শনাক্ত করে তা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে বিএফআইইউর নেতৃত্বাধীন যৌথ তদন্ত দল। যারা বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার সম্পদ শনাক্ত করে জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া সংস্থাটির সহায়তায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন দেশে আরও ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ শনাক্ত করেছে বলে জানা গেছে। 

এর মধ্যে এস আলম গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান জড়িত। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে অর্থ পাচার করা হয়েছে। তবে, সরকারের অর্থপাচার বিরোধী অভিযান যখন সফলতার দিকে এগিয়ে চলছে, তখন শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কিত কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের বিতর্কের পেছনে অর্থপাচারকারী শক্তিশালী চক্রের হাত থাকতে পারে, যারা এই অভিযানে বাধা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। বিতর্কটি মূলত অভিযানের গতি থামানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই বিতর্কের ফলে শাহীনুল ইসলাম এবং তার সহকর্মীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে এবং তারা বর্তমানে একটি চরম পরিস্থিতির সম্মুখীন। 

সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শাহীনুলের পুরোনো ছবি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে অশ্লীলভাবে সম্পাদিত করা হয়েছে, যা সাইবার অপরাধ হিসেবে গণ্য। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হয়েছে এবং চাকরির নীতিবিরোধী কোনো অপরাধ নয়, তবে এটি সাইবার অপরাধ এবং আইন অনুযায়ী অজামিনযোগ্য হতে পারে।

বিএফআইইউ একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, যা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে অর্থপাচার, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন এবং গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিস্তার রোধে কাজ করে। এই সংস্থা সন্দেহজনক এবং নগদ লেনদেন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 

তবে, বর্তমানে এই বিতর্কের কারণে বিএফআইইউসহ সরকারের অর্থপাচার বিরোধী বিভাগগুলোর কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ষড়যন্ত্র কর্মকর্তাদের দুর্বল করে দেয়, যার ফলে তারা তাদের কাজ সঠিকভাবে চালিয়ে যেতে পারবে না।

এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক এবং শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে উঠানো অভিযোগগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। তারা জানান, শাহীনুল ইসলাম গত এক বছরে একাধিক সাফল্য অর্জন করেছেন এবং তার নেতৃত্বে অর্থপাচার বিরোধী অভিযান সফলভাবে এগিয়ে চলছে। এজন্যই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

Read Entire Article