শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো কমপ্লিট শাটডাউন চলছে

1 hour ago 3

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিচার নিশ্চিত ও পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের পশ্চিম পাশে শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসময় শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ২০ অক্টোবর পোষ্য কোটা পুনর্বহাল নিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এর রেশ ধরেই এই লাগাতার কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই ফাঁকা হতে শুরু করে ক্যাম্পাস। বাসায় চলে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসন ভবনের বেশিরভাগ দপ্তরে তালা ঝুললেও কিছু কিছু অফিস খোলা রয়েছে। সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয়-২৪ হলে গিয়ে দেখা যায় আজ অনেকেই অফিস করছেন।

কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাকাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্টার আবু মো. তারেক বলেন, আমাদের দাবি সুস্পষ্ট, আমাদের উপ-উপাচার্য লাঞ্ছিত হয়েছেন। সেটার সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আমরা কোনোভাবেই কাজে ফিরে যাবো না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের কমপ্লিট শাটডাউন চলছে, কারণ গত ২০ তারিখে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ অনেককে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে কিছু শিক্ষার্থী নামক সন্ত্রাসীরা তারই প্রতিবাদে আমাদের এ কর্মসূচি। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব না। শুধু আমরা না গোটা বাংলাদেশের শিক্ষকেরা আজ স্তম্ভিত। যতক্ষণ পর্যন্ত এটার সুষ্ঠু বিচার না হবে ততক্ষণে আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীম বলেন, শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। শিক্ষার্থীরা কীভাবে শিক্ষকদের গায়ে হাত দেয়? এমন সন্ত্রাসীদের ছাত্রত্ব ও সার্টিফিকেট বাতিলের দাবি জানাই। যতদ্রুত সম্ভব শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের শাস্তি নিশ্চিত করুক প্রশাসন তাহলেই আমরা ঘরে ফিরবো।

গত বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত রাকসু নির্বাচন নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল ক্যাম্পাসে। প্রার্থীরা নানা কৌশলে প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন। এর মধ্যে সে দিন সন্ধ্যায় বাতিল হয়ে যাওয়া পোষ্য কোটা ১০ শর্তে ফিরিয়ে আনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পর থেকে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে গতকাল রোববার শিক্ষক-কর্মকর্তারা লাঞ্ছিতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে এক দিনের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ঘোষণা করে। গতকাল থেকে তাঁরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করেন।

গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে সভা শেষে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল আলীম। অফিসার সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ ঘোষণা দেন। গতকাল রাতে আবারও জাতীয়তাবাদী শিক্ষকেরা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে জানান।

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বিকেল পাঁচটায় রাকসু নির্বাচন কমিশনার জরুরি সভা করে নির্বাচনের তারিখ পেছান। আগামী মাসের ১৬ অক্টোবর ভোট ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

মনির হোসেন মাহিন/এমএন/জিকেএস

Read Entire Article