দশম গ্রেডে বেতন-ভাতাসহ তিন দফা দাবি আদায়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘লাগাতর অবস্থান’ কর্মসূচির প্রথমদিনেই পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।
শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অবস্থানের পর বিকেলে ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এ কর্মসূচি করতে পদযাত্রা নিয়ে শাহবাগ অভিমুখে যান শিক্ষকরা। তাতে বাধা দেয় পুলিশ।
পুলিশের ব্যারিকেডে শাহবাগ মোড়ে যাওয়ার আগেই রাস্তায় আটকা পড়েন শিক্ষকরা। সেখানে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন তারা। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ শিক্ষকদের শহীদ মিনারে ফিরে যেতে বললেও তারা শাহবাগ মোড়ে কলম সমর্পণ কর্মসূচি না করে ফিরবেন না বলে জানান।
বিকেল পৌনে ৪টার দিকে পুলিশ প্রথমে শিক্ষকদের অবস্থানকে লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এতে ছোটাছুটি শুরু করেন শিক্ষকরা। এরপর জলকামান নিক্ষেপ করে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের বাধার মুখে পণ্ড হয়ে যায় শিক্ষকদের কলম সমর্পণ কর্মসূচি।
শিক্ষক নেত্রী খায়রুন নাহার লিপিসহ আহত শতাধিক
পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল ও জলকামানে শতাধিক আন্দোলনরত শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ অতর্কিত আক্রমণ করেছে। সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল ছুড়েছে পুলিশ। এতে আমাদের সবার প্রিয় শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপিসহ শতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন। তারা এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পুলিশের এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা।

তবে আহত সবার নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি শামছুদ্দীন মাসুদ। তিনি বলেন, চাঁদপুরের শাহারাস্তির সহকারী শিক্ষক মো. ফারুক হোসাইন আহত হয়েছেন। তাছাড়া আরও অনেকে আহত হয়েছেন। সবার তালিকা করে প্রকাশ করা হবে।
আরও পড়ুন
শাহবাগে সাউন্ড গ্রেনেডে ছত্রভঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষকরা, আহত অনেকে
শিক্ষকদের ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে আনার যুক্তি নেই: গণশিক্ষা উপদেষ্টা
কর্মসূচি চলমান থাকবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও তিন দফা দাবি আদায়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমাদের কর্মসূচি চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।’
সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো- দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা সাড়ে ৬৫ হাজারের বেশি। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা তিন লাখ ৮৪ হাজার। গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে দশম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে থাকা শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। তবে এ পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকরা।
শিক্ষকরা কথা দিয়ে কথা রাখেনি: পুলিশ
শিক্ষকরা যে কথা বলে কর্মসূচি শুরু করেছিলেন, তা রাখেননি বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম।
রাস্তা থেকে শিক্ষকদের সরিয়ে দেওয়ার পর ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাদের জানিয়েছিলেন, তারা অবস্থান কর্মসূচি করবেন। এরপর দাবি-দাওয়ার স্মারকলিপি দিয়ে ফিরে যাবেন। কিন্তু আমরা দেখলাম, তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সহিংস মনোভাব দেখাচ্ছিলেন। পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সরিয়ে দিয়েছে। জনগণের ভোগান্তি দূর করতে রাস্তা ফাঁকা করা হয়েছে।
শিক্ষকদের আন্দোলন অযৌক্তিক: গণশিক্ষা উপদেষ্টা
এদিকে, খুলনায় এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, দশম গ্রেডের দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের এ আন্দোলন অযৌক্তিক।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ সহকারী শিক্ষক মনে করেন দশম গ্রেডের এ দাবি যৌক্তিক নয়। প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষকদের সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে তাদের দশম গ্রেডে আনা; এটি সম্ভব নয়। একবারে ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে আনার কোনো যুক্তিই নেই।
‘তারা যেন ১১তম গ্রেড পেতে পারেন, সেজন্য আমরা কাজ করছি। তাদের এ মুহূর্তে আন্দোলনে যাওয়াটাও যৌক্তিক নয়।’ যোগ করেন বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
এএএইচ/ইএ/জেআইএম

2 hours ago
5








English (US) ·