শিক্ষকদের বাধায় প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভাইস চ্যান্সেলরের বাসভবনে তালা দিতে গিয়ে তালা না ঝুলিয়েই ফিরেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ভিসির বাসভবনে তালা দিতে যান তারা। বাসভবনের প্রধান ফটকে তালা দিতে গেলে ভবনের ভেতরে থাকা শিক্ষকরা বেরিয়ে আসেন এবং বাধা দেন। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এক পর্যায়ে তালা না দিয়েই ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ভিসি মাসুদ স্যারকে আমরা বর্জন করেছি। প্রশাসনের ওপর আমরা আস্থা রাখি না, তারা আমাদের নিরাপত্তা প্রদান করতে পারেনি। এ ভিসিকে আমরা সবাই বর্জন করেছি, তাই ওনার বাসভবনে কেউ থাকতে পারবে না। গত ২২ ফেব্রুয়ারি সব শিক্ষার্থী মিলে ভিসির বাসভবনে তালা মেরে দিয়েছিলাম।
কিন্তু সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার সময় আমাদের কাছে খবর আসে যে, ভিসির বাসভবনের তালা ভাঙা হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমরা জানিয়ে দিয়েছিলাম মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার ভেতরে যেন ভিসির বাসভবন খালি করে দেওয়া হয়।
তারা বলেন, কুয়েটের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিরাপত্তার স্বার্থে চলে গেছে। তারপরও আমরা আছি তাই হল খোলা আছে, একাডেমিক কার্যক্রম আমরা বন্ধ রেখেছি।
এদিকে বাসভবনের প্রধান ফটকে ভেতর থেকে তালা লাগানো ছিল আগে থেকেই। পরে কর্মচারীরা তালা খুলে দিলে শিক্ষকরা বেরিয়ে এসে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।
কুয়েটের অধ্যাপক আশরাফুল গনি ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রদের দাবির বিষয়টি মাথায় রেখে প্রশাসন কাজ করছে, আমরাও কাজ করছি। কিন্তু কিছু কিছু ছাত্র তাদের সীমা অতিক্রম করছে। তারা ছাত্রদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে, আমাদের বিভিন্নভাবে গালিগালাজ করছে। এটা তারা করবে কখনো আশা করিনি। আমি ১৯৯১ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ছিলাম। এখানকার শিক্ষক হয়েছি, রাত-দিন এখানে কাজ করছি। আমরা এ প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের সব দাবি মানার জন্য ভিসি এবং আমরা দিন-রাত কাজ করছি। তাদের দাবির সঙ্গে আমরা সহমত প্রকাশ করছি। এরপর তারা আমাদের বাসায় আসবে, তালা দেবে, আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে এটা আমরা পছন্দ করছি না। আমরা ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করছি তোমাদের দাবির সঙ্গে আমরা একমত।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আমরা আহ্বান করেছি তারা যেন আবাসিকে না আসে। তারা তাদের দাবি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। তাদের আর আন্দোলন করার প্রয়োজন আছে কি না জানি না। আমরা তো দেখছি ভিসি দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। হলে এক সময় যে পরিবেশ ছিল, এখন অনেক ভালো অবস্থা আছে। আমরা ভালো রিপোর্ট পাচ্ছি, তাহলে কেন তোমরা ভিসির পদত্যাগ চাচ্ছ। ভিসি যদি ব্যর্থ হয় তাহলে আমরাও তোমাদের সঙ্গে একমত হব।’
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘যেখানে প্রশাসন ছাত্র-শিক্ষক সবাইকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, আমরা সুন্দরভাবে ক্যাম্পাসকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, ক্যাম্পাসকে পুনর্গঠন করছি। যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সে সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছি, তখন সমাধানের দিকে ফোকাস না করে কিছু কিছু ছাত্র পেছন দিক থেকে, মিডিয়ায় যৌক্তিক কথাগুলো এড়িয়ে অযৌক্তিকভাবে আলটিমেটাম দিয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা এখন আসছে এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হলো না কেন? এর জন্য ভাইস চ্যান্সেলরকে পদত্যাগ ও শিক্ষকদের জবাব দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউন্ডারির মধ্যে কাজ করে এটা তো কারও অজানা নয়। নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করল নাকি করল না সে ব্যাপারে চাপ দিচ্ছি। এখানে আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। সেখানে ছাত্রদের বিভিন্ন প্রশ্নের বিষয়ে সিনিয়র শিক্ষকরা ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে। আমরা সেগুলো জানার চেষ্টা করছি, সেই অনুযায়ী পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন কাজ করছে না, কেন কাজ করল না আমাদের তরফ থেকে আমরা সেগুলো বিশ্লেষণ করছি। এ অবস্থায় ছাত্ররা এসে এভাবে চড়াও হবে, শিক্ষকরা কোনোভাবে মেনে নেবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো ছাত্রদের নিয়েই কাজ করছিলাম, তারাও আমাদেরকে ফিডব্যাক দিচ্ছে। ছাত্ররা বলছে- স্যার আমাদের মধ্যে অনেক গ্রুপ আছে, আমরা আমাদের মধ্যে সমন্বয় করতে পারছি না।’
ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এ শিক্ষক নেতা বলেন, ‘তদন্ত কমিটি কাজ করছে এবং তা করুক। তাদের সে সময়টা দেওয়া হোক, আমরাও দেখি। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমরা জানি না তারা কোথায় কীভাবে কী করছে।’