রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলায় এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (২০ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাগমারা মোড় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম মো. জয় মিজি (২৬)। তিনি সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের সূর্যনগর গ্রামের মো. টুকু মিজির ছেলে। তিনি সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে ছিলেন। তারা বাবা টুকু মিজি মিজানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মিজানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট দুপুর সোয়া ১টার দিকে গোয়ালন্দ মোড়ের করিম পেট্রোল পাম্পের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সাধারণ জনগণের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হামলা করে। এ ছাড়াও তাদের ওপর বোমা নিক্ষেপসহ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণ করে। এসময় সন্ত্রাসীদের মারপিট, গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। এ ঘটনায় গত ২ অক্টোবর সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের ব্রাকপাড়া গ্রামের মো. ইদ্রিস ফকিরের ছেলে মো. শাহিন ফকির (৩৮) বাদি হয়ে সদর থানায় ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত নামা ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় জয় মিজি এজাহার নামীয় আসামি ছিলেন।
অপরদিকে গত ১৮ জুলাই বিকেল ৩টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র, অভিভাবক ও শিক্ষকরা রাজবাড়ী শহরের বড়পুল মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে অতর্কিতভাবে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর নির্দেশে সন্ত্রাসীরা আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশে বোমা নিক্ষেপ করে ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ছাড়া আন্দোলনকারীদের বেধড়ক মারধর করা হয়।
এ ঘটনায় গত ৩০ আগস্ট শিক্ষার্থী রাজিব মোল্লা বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী, ইরাদত আলীর ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক কাজী রকিবুল হাসান শান্তনু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ রাজিব, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান মিয়া সোহেল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শাহিন শেখ ও রাজবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র আলমগীর শেখ তিতুসহ ১৭০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলাতেই জয় মিজি এজাহার নামীয় আসামি ছিলেন।
মামলার বাদি শাহিন ফকির জানান, গত ৫ আগস্ট গোয়ালন্দ মোড়ে করিম পেট্রোল পাম্পের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে নৎসাত করার জন্য আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এসময় সন্ত্রাসীদের হামলায় আমার আপন ভাই রেজাউল করিম ও মা রাহেলা বেগমসহ আরও অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় আমি ৮১ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করি।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজবাড়ী সদর থানার ওসি মো. মাহমুদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলায় সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয় মিজিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দুটি মামলার সে এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন। তাকে আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।