শিমুল বিশ্বাসে সম্ভাবনা দেখছে বিএনপি, জামায়াতে ‘বিভাজন’

1 month ago 11

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে ক্রমেই দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জোরালো হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো এ নিয়ে ব্যাপক সরব থেকেছে। সবার দাবির মুখে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনও জানিয়েছেন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট।

তবে ভোটের সময় নির্ধারণের অনেক আগ থেকেই খুব জোরালো না হলেও হালকা পরিসরে মাঠপর্যায়ে অর্থাৎ সংসদীয় আসনভিত্তিক প্রস্তুতি শুরু করেছেন অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

মাঠপর্যায়ে কর্মী সংযোগ ও মনোনয়ন পেতে দলীয় হাইকমান্ডে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন তারা। পাবনার চারটি আসনে বিএনপির প্রাথমিক নির্ধারিত প্রার্থীদের প্রস্তুতি নিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পাবনা সদর বা পাবনা-৫ আসন থেকে আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে কাজ শুরুর প্রাথমিক নির্দেশনা পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তবে নির্দেশনা পাওয়ার আগে থেকেই তিনি স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ বিভিন্ন সভার মধ্য দিয়ে সংযোগ বৃদ্ধির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নির্দেশনা পাওয়ার পর এর গতি আরও বাড়তে শুরু করেছে।

শিমুল বিশ্বাস কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ায় শুরু থেকেই তার সম্ভাবনা বড় করে দেখছেন কর্মী-সমর্থকসহ অনেকেই। সবশেষ তাকেই এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রাথমিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিগত সময়গুলোতে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত ট্রাস্টের মাধ্যমে মসজিদ-মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মাঝে সহায়তা বা সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডের কারণেও এ আসনে তার ভিন্ন একটি সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে। ফলে এ আসনে তার বিজয় নিয়ে আশাবাদী কর্মী-সমর্থকরা।

এদিকে এ আসনে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির প্রিন্সিপাল মাওলানা ইকবাল হুসাইনকে দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। উভয় দলের প্রার্থীরই ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকায় এ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। তবে এ আসনে জামায়াতেও কিছুটা বিভাজন লক্ষ্য করা গেছে। যদিও দলের পক্ষ থেকে তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে জামায়াত।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা পাবনা সদর নিয়ে পাবনা-৫ আসন গঠিত। দুজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষসহ নারী-পুরুষ মিলিয়ে এ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ২০ হাজার। তালিকা এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় এ সংখ্যা বাড়তে বা কমতে পারে।

তথ্য বলছে, ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। সাবেক এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স টানা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ২০০১ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা আব্দুস সোবহান নির্বাচিত সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল ছাড়া এ আসনে বিএনপির কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি। ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে ২০০০ সালের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে মাজহার আলী কাদেরী নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের পক্ষে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল। তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে একবার এবং বিএনপির হয়ে দুবার এই এলাকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এসময় মাওলানা ইকবাল হুসাইন জামায়াতের মনোনয়ন পাওয়ার নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছে জানিয়ে তার মনোনয়ন বাতিল করে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মাওলানা আব্দুর রহিমকে মনোনীত করার দাবি জানান বিক্ষুব্ধরা। তবে এ মানববন্ধন বা বিক্ষোভের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত এক বার্তায় নিশ্চিত করেন মাওলানা আব্দুর রহিম। নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেন জামায়াত নেতা ইকবাল হুসাইনও।

সূত্র মতে, এ আসনে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে আগে থেকেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী মুখোমুখি অবস্থানে থাকে। তবে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনরতদের ওপর হামলা ও হত্যার অভিযোগে অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতা পলাতক এবং কয়েকজন কারাগারে। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে বলেও মনে করছেন অনেকেই। তাছাড়া নেতারা পলাতক ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় দেশজুড়েই আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। ফলে আপাতত নির্বাচনী সমীকরণের বাইরে এ দলটি।

এর বাইরে এ আসনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে বিএনপি ও জামায়াত। ফলে আগামী নির্বাচনে এই দুই দলের মধ্যেই হতে পারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এই আসনে আগামী নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন পাঁচ-ছয়জন। এদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সহকারী ও কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুন্নবী স্বপন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনিসুল হক বাবু ও শেখ আবু ওবায়দা তুহিন উল্লেখযোগ্য।

তবে শিমুল বিশ্বাস কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ায় শুরু থেকেই তার সম্ভাবনা বড় করে দেখছেন কর্মী-সমর্থকসহ অনেকেই। সবশেষ তাকেই এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রাথমিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিগত সময় পারিবারিক বা ব্যক্তিগত ট্রাস্টের মাধ্যমে মসজিদ-মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মাঝে সহায়তা বা সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডের কারণেও এ আসনে তার ভিন্ন একটি সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে। ফলে এ আসনে তার বিজয় নিয়ে আশাবাদী কর্মী-সমর্থকরা।

যে মানববন্ধনের কথা বলছেন সেখানে আমাদের দলের কেউ যায়নি। যাকে প্রার্থী করার কথা বলা হয়েছিল তিনি নিজেও এরকম কখনো চাননি। একটি মহল ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এটি করেছে। দু-একজন কখনো আমার পরিচয় দিয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করলে আমাকে জানানোর সাথে সাথে আমি সেটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রশাসনকে আইনপ্রয়োগ করতে বলেছি। অর্থাৎ চাঁদাবাজি বা অন্যান্য অভিযোগ মিথ্যা।

এ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, নির্বাচনে অন্য প্রার্থীদের যেমন প্রস্তুতি থাকে একইরকম প্রস্তুতি আমাদেরও রয়েছে। বিজয় নিয়ে আমরা আশাবাদী।

শিমুল বিশ্বাসে সম্ভাবনা দেখছে বিএনপি, জামায়াতে ‘বিভাজন’পাবনা সদর আসনে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন-সংগৃহীত ছবি

এদিকে এ আসনে জামায়াতের ব্যাপক কর্মী-সমর্থক থাকায় সম্ভাবনায় পিছিয়ে নেই দলটির মনোনীত প্রার্থী প্রিন্সিপাল মাওলানা ইকবাল হুসাইন। দলের বাইরে তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাও রয়েছে। প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা আব্দুস সুবহানের পর এ আসনে প্রিন্সিপাল ইকবাল হুসাইনকেই বার বার মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াত।

তবে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে দলীয় নীতির বাইরে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র হত্যা মামলার আসামিদের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ এনেছে দলটির নেতাকর্মীদের একাংশ। এসব অভিযোগ এনে সদর উপজেলার পুষ্পপাড়া বাজারে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এসময় মাওলানা ইকবাল হুসাইন জামায়াতের মনোনয়ন পাওয়ার নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছে জানিয়ে তার মনোনয়ন বাতিল করে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মাওলানা আব্দুর রহিমকে মনোনীত করার দাবি জানান বিক্ষুব্ধরা। তবে এ মানববন্ধন বা বিক্ষোভের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত এক বার্তায় নিশ্চিত করেন মাওলানা আব্দুর রহিম। নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেন জামায়াত নেতা ইকবাল হুসাইনও।

জামায়াত মনোনীত প্রার্থী প্রিন্সিপাল মাওলানা ইকবাল হুসাইন বলেন, পাবনা সদর জামায়াতের আসন। এটি সবাই জানে। এখানকার মানুষ জামায়াতকে দারুণভাবে লালন ও ধারণ করে। ২০ বছর ধরে আমি এই আসনের মানুষের সঙ্গে কাজ করছি। শুধু নির্বাচনের সময় নয়, সারাবছরই জনগণের সঙ্গে থেকেছি, বিপদে আপদে পাশে দাঁড়িয়েছি। মানুষ এখন তার প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচনকেন্দ্রিক সবধরনের প্রস্তুতি অনেক আগেই আমরা সম্পন্ন করেছি। তবে দলের সাথে একমত পোষণ করে বলতে চাই, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এবারও যদি মানুষ ভোট দিতে না পারে তবে নির্বাচন দিয়ে কি লাভ হবে? এক্ষেত্রে সংস্কার করে নির্বাচন দিলে সবার জন্য সেটি ভালো হবে।

তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, যে মানববন্ধনের কথা বলছেন সেখানে আমাদের দলের কেউ যায়নি। যাকে প্রার্থী করার কথা বলা হয়েছিল তিনি নিজেও এরকম কখনো চাননি। একটি মহল ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এটি করেছে। দু-একজন কখনো আমার পরিচয় দিয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করলে আমাকে জানানোর সাথে সাথে আমি সেটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রশাসনকে আইন প্রয়োগ করতে বলেছি। অর্থাৎ চাঁদাবাজি বা অন্যান্য অভিযোগ মিথ্যা।

জুলাই অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা নেতৃত্বদের নিয়ে গঠিত তরুণদের নতুন দল এনসিপির কোনো কমিটি নেই জেলায়। ফলে এ আসনে তাদের হয়ে এখনো কাউকে মাঠে দেখা যায়নি। তবে এর বাইরে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের কিছু সংখ্যক কর্মী-সমর্থক রয়েছে। চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টি অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় থাকায় এখনো নির্বাচনকেন্দ্রিক তাদের কোনো কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থিতা নিয়েও রয়েছে অস্পষ্টতা।

তবে সরকার পতনের পর থেকে জেলার অন্যান্য দু-একটি জায়গায় গণঅধিকার পরিষদের কিছুটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখা গেলেও সদর আসনে সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। তবে এ দলের পক্ষে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বলে নিজেই জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম সরওয়ার খান জুয়েল। এছাড়া এ আসনে ইসলামী আন্দোলনেরও বেশ সংখ্যক কর্মী-সমর্থক আছে। এ আসনে এ দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন এএসএস আরিফ বিল্লাহ।

তবে সরেজমিনে নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, এ আসনে চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলনসহ নানান অপরাধ লাঘবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারে রেখেছেন এ আসনের ভোটাররা।

তাদের দাবি, পাবনা প্রাচীন জেলা হলেও জেলা শহরে নেই তেমন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমানে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। রাস্তাঘাটের বেহাল দশায় জনগণ নাজেহাল। অপরাধ লাঘবের পাশাপাশি এসব সমস্যা ও সংকট নিরসনে অঙ্গীকারবদ্ধ প্রার্থীকেই ভোট দিতে চান তারা।

এএইচআইএন/এসএইচএস/এমএফএ/এএসএম

Read Entire Article