দলগত খেলা ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের শেষ টেস্টে ১০১ রানের জয় পেতো না বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে ২০১ রানে হেরে যাওয়ার পর দুর্দান্ত কামব্যাক করাও সম্ভব হতো না।
প্রথম বাক্য দুটি সত্য ধরে নিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ১৫ বছর পর টেস্ট জয়ের কৃতিত্ব প্রত্যেক ক্রিকেটারদের আলাদা করে দিতে হয়। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের গুরু হেড কোচ ফিল সিমন্স সেটিই করলেন। দুর্দান্ত টেস্ট জয়ে অবদান রাখা প্রত্যেক ক্রিকেটারকে পৃথকভাবে প্রশংসায় ভাসালেন তিনি।
কিংসটনের সাবিনা পার্ক স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬৪ রান করেও ১৮ রানের লিড পাওয়া; দ্বিতীয় ইনিংসে সেই লিডকে ২৮৬ রানে বর্ধিত করার ব্যাপারটা বাংলাদেশের জন্য ছিল দারুণ রোমাঞ্চকর। জাকের আলী অনিকের ক্যারিয়ারসেরা ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করতেই হয়।
২৮৭ রানের লক্ষ্য দিয়ে ক্যারিবীয়দের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে মাত্র ১৮৫ রানে অলআউট করে দেওয়ার কৃতিত্ব তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানাদের।
দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের কামব্যাক করাটাই অভিভূত করেছে সিমন্সকে। ব্যাটারদের ইতিবাচক মানসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি।
সিমন্স বলেন, ‘ব্যাটাররা যে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এসেছিল তা পছন্দ করেছি। শেষ কয়েক ম্যাচে তাদের টিকে থাকার মানসিকতা দেখা গেছে। তৃতীয় দিনে দেখছেন ওরা বলছে, ‘‘খেলতে এসেছি’’। আমি এটা পছন্দ ও উপভোগ করি। আমি নিশ্চিত করেছি, তারা জানে যে এখন থেকে আমাদের এভাবেই খেলতে হবে। টেস্ট জয়ের জন্য তরুণ খেলোয়াড়রা অপেক্ষায় ছিল। প্রথম টেস্ট হারের পর তাদের কামব্যাক করতে দেখে ভালো লাগছে। এটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের।’
টানা তিন টেস্টে ফিফটি পেয়েছেন জাকের আলী। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৮, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫৩ ও কিংসটনে দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১ রানের ইনিংসে খেলেন ডানহাতি টাইগার ব্যাটার।
জাকের আলীকে নিয়ে সিমন্স বলেন, ‘জাকের এক টানা টেস্টে তিনটি অর্ধশতক করেছে। তাই সে তার খেলা সম্পর্কে জানে। আমরা দেখেছি, সে প্রতিটি বোলারকে খেলতে পেরেছে। সে এখান (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) থেকে যা পায় তাই নিতে হবে এবং এটিতে উন্নত করার চেষ্টা করতে হবে। এটি সবসময় হয় না, যেমনটা এবার হয়েছে।’
মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বের প্রশংসা করে সিমন্স বলেন, ‘আমি (মেহেদীকে) দেখে মুগ্ধ হয়েছি। সে অল্প সময়ের নোটিশে শান্তর (নাজমুল হোসেন) কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়েছে। সে দায়িত্বটি নিয়েছে ও দলকে চালিয়ে নিয়েছে। মেহেদী ও তাইজুল একে অপরের পরিপূরণ হিসেবে খেলেছে। মিরাজ কিছুটা দ্রুতগতিতে রান তুলেছে, তাই ভিন্ন ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করেছে।’
৫০ রানে ৫ উইকেট নেওয়া তাইজুলকে নিয়ে সিমন্স আরও বলেন, ‘তাইজুল স্টাম্পে আঘাত করতে পছন্দ করেন। তাই সে (প্রচলিত) স্পিনারদের চেয়ে বেশি আর্ম বল করেন। মনে হচ্ছে, সে প্রতি ম্যাচেই তুলনামূলক ভালো হচ্ছে। আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, এখানে প্রতিটি সেশনে তার বোলিংয়ে তার ভিন্ন ভিন্ন চিন্তাভাবনা ছিল।’
ওয়ার্কলোডের কারণে প্রথম ইনিংসে খেলতে না পারা নাহিদ রানা দ্বিতীয় টেস্টে শিকার করেছেন ৬ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে ৬ ম্যাচে ২০ উইকেটের মালিক হয়ে গেলেন ডানহাতি গতিতারকা। রানাকে দেখেও মুগ্ধ হয়েছেন সিমন্স।
টাইগার হেড কোচ বলেন, ‘শারজায় অভিষেক ওয়ানডের চেয়েও (জ্যামাইকার রানার পারফরম্যান্স দেখে) আমি আরও বেশি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এই উইকেটে এতটা ধারাবাহিক হওয়া এবং লেন্থ হিট করার জন্য। গতকাল দিনের শেষে সে ১৪০-১৫০ কিলো গতিতে বোলিং করছিল। তরুণ ফাস্ট বোলারকে যতটা মূল্যায়ন করা দরকার, আমরা সেটা করছি না। গতিতে সে চিত্তাকর্ষক। শেখার ক্ষুধাও রয়েছে। আমি নিশ্চিত, তার কাছ থেকে আরও অনেক কিছু দেখতে পাবো।’
/এমএস