শীতে রাঙ্গামাটি ভ্রমণে ঘুরে আসুন ৯ স্পটে

2 weeks ago 22

শীতে পাহাড় ভ্রমণ হতে পারে রোমাঞ্চকর। এজন্য অনেক ভ্রমণপিপাসুরাই শীতে বেড়িয়ে পড়েন পাহাড় দর্শনে ও ট্রেকিংয়ে। আর দেশের মধ্যে ছোট-বড় পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য দেখার সেরা এক স্থান হলো রাঙ্গামাটি। লাল মাটি, হ্রদ, পাহাড় ও ঝরনার অপরূপ দৃশ্য দেখতে এবারের শীতে ঘুরে আসুন রাঙ্গামাটি।

প্রাণ ভরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন রাঙ্গামাটির আশপাশের ৯ স্থানে। চলুন জেনে নেওয়া যাক রাঙ্গামাটির কোন কোন পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে শীতে বাড়ে ভ্রমণপিপাসুদের ভিড়-

ঝুলন্ত সেতু

রাঙ্গামাটি ভ্রমণে যাবেন অথচ ঝুলন্ত সেতু ঘুরবেন না, তা তো হয় না। কাপ্তাই হ্রদের দুই পাহাড়কে ৩৩৫ ফুটের একটি ঝুলন্ত সেতু কীভাবে মেলবন্ধন করেছে, তা দেখতে চাইলে স্থানটি ভ্রমণ করুন। এ শহরের একপাশে ঝুলন্ত সেতু। শহরের যে কোনো জায়গা থেকে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ঝুলন্ত সেতুতে যাওয়া যায়।

সুবলং

ঝুলন্ত সেতু থেকে সুবলং যেতে পারবেন নৌকায় চড়ে। সুবলঙে যেতে যেতে হ্রদ ও পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে আপনি মোহিত হয়ে পড়বেন। দু’দিকে পাহাড় আর কাপ্তাই হ্রদ হয়ে সুবলং ছুটে চলা একই সঙ্গে হ্রদের জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্যও এই যাত্রাপথে ধরা পড়বে।

সুবলঙে যাত্রাপথে আছে প্রচুর পাহাড়ি ঝরনা। তবে তার মধ্যে বিখ্যাত বড় ও ছোট ঝরনা। রাঙ্গামাটি শহর থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ঘণ্টাখানেকের পথ সুবলং। এই পথে যেতে যেতে বিভিন্ন পাহাড়ি দ্বীপে আছে ছোট ছোট পর্যটন স্পট। যেখানে গিয়ে পরিবার নিয়ে পাহাড়ের ঐহিত্যবাহী খাওয়া-দাওয়াও সারতে পারবেন।

ফুরোমোন

ফুরোমোনকে বলা হয় দ্বিতীয় সাজেক। সাজেককে যেমন মেঘের রাজ্য বলা হয় তেমনি ফুরোমোনে উঠলে দেখতে পারবেন মেঘের রাজ্য আর সকালে মেঘ সরিয়ে সূর্য আলো পড়তেই দেখা যায় রাঙ্গামাটি শহর। যেন মনে হবে ড্রোন দিয়ে দেখা শহর। ফুরোমোনে যেতে হলে শহর থেকে অটোরিকশায় ৩০ মিনিট পথ পেরিয়ে সাপছড়ি এলাকা হয়ে উঠতে হবে। ফুরোমোন চূড়ায় উঠতে দুইঘণ্টা সময় লাগে।

শীতে রাঙ্গামাটি ভ্রমণে ঘুরে আসুন ৯ স্পটে

পলওয়েল পার্ক

রাঙ্গামাটির বর্তমানে পর্যটকদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানের নাম পলওয়েল পার্ক। মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে আপনি পাহাড় থেকে দেখতে পারবেন বিস্তৃত হ্রদের সৌন্দর্য ও পার্কের নানান স্থাপত্য সৌন্দর্য। একই সঙ্গে আছে ঝুলন্ত সেতু। সেটি পার হয়ে দেশের প্রথম লাভ পয়েন্টে।

ভালবাসার বন্ধনকে চিরস্থায়ী করতে অনেক যুগল দম্পতি লাভ লক পয়েন্টে ভালবাসার তালা ঝুলিয়ে তালার চাবি কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফেলে দেয়। জেলা পুলিশের পরিচালনায় এই পার্কের পাশে আছে কটেজ ও সুইমিং পুল। শহরের ডিসি বাংলো এলাকার পাশেই পলওয়েল পার্ক।

আরণ্যক

রাঙ্গামাটি শহরে সেনাবাহিনীর পরিচালনায় পর্যটকদের বিনোদন দেওয়ার লক্ষ্যে খুলে দেয়া হয় আরণ্যক পার্ক। পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি এই পার্কে গেলে হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আরণ্যক থেকে স্বল্প দূরত্বে আরেকটি পাহাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ওয়াটার ল্যান্ড। যেখানে আছে সুইমিংপুল ও খেলার সামগ্রী।

আরও পড়ুন

চাকমা রাজবাড়ি

কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর পুরোনো রাঙ্গামাটির সঙ্গে ডুবে যায় পুরোনো রাজবাড়িও। ১৯৬০ সালে পুরোনো রাজবাড়ি ছেড়ে শহরের মধ্যখানে বর্তমান স্থানে চাকমা রাজবাড়ি গড়ে তোলা হয়। শহরের রাজবাড়ি এলাকা থেকে নৌকা দিয়ে পেরিয়ে চাকমা রাজবাড়ি যেতে হয়। যেখানে গেলে চাকমা ঐতিহ্য চোখে পড়বে।

শীতে রাঙ্গামাটি ভ্রমণে ঘুরে আসুন ৯ স্পটে

মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতিসৌধ

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ ১৯৭১ সালে ২০ এপ্রিল হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন রাঙ্গামাটির নানিয়াচর বুড়িঘাটের চেঙ্গী নদীর পাড়ের একটি টিলায়। তিনি যে টিলায় শহীদ হন সেখানে আছে তার কবর। নির্মাণ করা হয়েছে ‘সীমান্ত শিখা’ নামে স্মৃতিস্তম্ভ।

রাঙ্গামাটি শহরের বনরূপা, গর্জনতলী থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যেতে সময় লাগে ঘণ্টাখানেকের একটু বেশি। একটি নৌকার ভাড়া পড়বে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। স্পিড বোটে সময় লাগবে ২০-২৫ মিনিট। ভাড়া তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। এটি পরিদর্শনে টিকিটের প্রয়োজন হয় না।

আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়ক

রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে আসলে আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কে ঘুরতে না গেলে রাঙ্গামাটির আসল সৌন্দর্যটাই মিস করবেন। কাপ্তাই হ্রদ থেকে কয়েকশ ফুট উঁচু পাহাড়ের ঢাল দিয়ে চলে যাওয়া আঁকাবাঁকা সড়ক দিয়ে কাপ্তাই চলে যাওয়া যায়।

১৯ কিলোমিটারের সড়কটি পুরোটাই মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেছে। কখনো একপাশে পাহাড় অন্যপাশে দিগন্তবিস্তৃত কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য আবার কখনো কখনো দু’পাশের পাহাড়ের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা সড়ক পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এই সড়ক ধরে গড়ে উঠেছে বড়গাঙ, বেরান্নে লেক শো, বার্গি বেশকিছু পাহাড়ি ক্যাফে ও রিসোর্ট।

শীতে রাঙ্গামাটি ভ্রমণে ঘুরে আসুন ৯ স্পটে

আসামবস্তি ও পুরানপাড়া সেতু

রাঙ্গামাটি শহরে স্থানীয়দের কাছে এখন বিনোদনের প্রধান আকর্ষণ আসামবস্তি সেতু ও রিজার্ভ বাজার এলাকার পুরানপাড়া সেতু। কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্মিত এই দুই সেতুটি দাঁড়ালে হ্রদ ও পাহাড়ের সৌন্দর্য ও নির্মল বায়ু পাওয়া যায়।

দুই সেতু থেকে রাঙ্গামাটি শহরের সবচেয়ে বড় পাহাড় ফুরোমোনের সৌন্দর্য ও ফুরোমোনের আড়ালে সূর্যাস্ত দেখা যায়। এছাড়া শহরের মধ্যে সুখীনীলগঞ্জ, রাঙ্গামাটি পার্ক, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ডিসি বাংলো, রাজবন বিহারেও ভ্রমণ করা যাবে।

কীভাবে যাবেন?

রাজধানী ঢাকার গাবতলী, কলাবাগান, পান্থপথ, ফকিরাপুল থেকে ডলফিন, শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, সেন্টমার্টিন, এস আলম বাস যোগে রাঙ্গামাটিতে যেতে পারেন। শ্যামলী ও সেন্টমার্টিনে এসি সার্ভিস চালু আছে। বিভিন্ন বাসের ভাড়া ভিন্ন ভিন্ন। ৭/৮ ঘণ্টায় রাঙ্গামাটি পৌঁছে যাবে বাসগুলো।

কোথায় থাকবেন ও খাবেন?

রাঙ্গামাটিতে থাকার জন্য আছে বহু হোটেল-মোটেল। পাবেন বিভিন্ন সরকারি বিশ্রামাগার। রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে এসে অনেকে আদিবাসী খাবার খেতে চান। তাদের জন্য শহরের রাজবাড়ি এলাকায় আছে একাধিক হোটেল।

যার মধ্যে টুগুন রেস্টুরেন্ট, পিবির ভাতঘর, সমাজ্জ্যে, বিজুফুল, স্টিফেন ভাতঘর, বনরূপা বাজারে যদন ক্যাফে, আইরিশ অন্যতম। কাপ্তাই হ্রদের মাঝখানে দ্বীপের কোথাও খেতে মন চাইলে চাং পাং, পেদা টিং টিং, মেজাং, গরবা রেস্টুরেন্টে খাওয়া যায়। তবে পরিবহন খরচের তারতম্যের কারণে দাম শহরের রেস্টুরেন্টের চেয়ে সেখানে একটু বেশি।

জেএমএস/জেআইএম

Read Entire Article