শুল্ক কার্যকর হলো আজ, কীভাবে সামলাবেন মোদি?

7 hours ago 3

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চলতি মাসের শুরুতে একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দেশটির সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে এমন লাখ লাখ ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘বিশাল কর ছাড়ের’ ঘোষণা আসছে।

দেশটির স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় দিল্লির লাল কেল্লা থেকে সাধারণ মানুষ এবং সমর্থকদের সামনে একটি সমাবেশও করেছিলেন মোদি। সেখান থেকে ছোট দোকান মালিক এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দোকানের বাইরে ‘স্বদেশি’ বা ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ বোর্ড লাগানোরও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

মোদি বলেছিলেন, হতাশা থেকে নয়; বরং গর্ব থেকে আমাদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্বার্থপরতা বৃদ্ধি পেলেও আমাদের সেসব অসুবিধা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের যেন কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, সেভাবে সামনে এগোতে হবে।

এরপর টানা দুই সপ্তাহে অনেক সভা-সমাবেশে মোদি গিয়েছেন, সেখানে তিনি এই একই কথা বলেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের যে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন মোদির এই অবস্থানকে অনেকে সেটির বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবেই দেখছেন।

বুধবার (২৭ আগস্ট) থেকে ভারতের ওপর মার্কিন শুল্ক কার্যকর হলো। রাশিয়া থেকে তেল আমদানির শাস্তিস্বরূপ ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপ করেছেন ট্রাম্প। ভারত থেকে যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করবে সেসব পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।

আমেরিকান গ্রাহকদের পোশাক থেকে শুরু করে হীরা এবং চিংড়ি পর্যন্ত সবকিছু সরবরাহ করে এমন রপ্তানি নির্ভর শিল্পের লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশবাসীর প্রতি মোদির স্পষ্ট বার্তা—‘ভারতে তৈরি করুন এবং ভারতে ব্যয় করুন’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি দীর্ঘমেয়াদি কর সংস্কারকে উৎসাহিত করা সম্ভব হয় তবে এই ধাক্কা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের জন্য কিছুটা সহায়ক হতে পারে এবং অবিলম্বে জনগণের হাতে আরও বেশি অর্থ পৌঁছানো যাবে।

চলতি বছরের শুরুতে বাজেটে ১২ বিলিয়ন ডলারের আয়কর ছাড় ঘোষণা করার পর এখন ভারতের পরোক্ষ কর কাঠামোর একটি সংস্কারের (পণ্য ও পরিষেবা কর হ্রাস এবং সরলীকরণ) লক্ষ্যে কাজ করছে মোদি সরকার।

কর ছাড়ের ফলে ভোক্তানির্ভর খাতগুলোর সবচেয়ে বেশি উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন—স্কুটার, ছোট গাড়ি, পোশাক এবং সিমেন্টের মতো পণ্য।

সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও বেশিরভাগ বিশ্লেষক ধারণা করছেন কম জিএসটির কারণে যে রাজস্ব ক্ষতি হবে তা দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজেটের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ দ্বারা পূরণ করা হবে।

সুইস বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএসের মতে, জিএসটি কমানোর এই সিদ্ধান্ত মোদির আগের নেওয়া, করপোরেট এবং আয়কর কমানোর তুলনায় বড় প্রভাব ফেলবে, কারণ এগুলো ক্রয়ের সময় সরাসরি ভোগকে প্রভাবিত করে।

আরও পড়ুন : ইরান ও পাক সেনাপ্রধানের ফোনালাপ, আলোচনায় ছিল যেসব বিষয়

মোদির কর ছাড়পত্র ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক সুদের হার আরও কমানোর সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা গত কয়েক মাসে এক শতাংশ হারে কমানো হয়েছে। এ ছাড়া ঋণ প্রদানকে আরও উৎসাহিত করতে পারে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, আগামী বছরের শুরুতে প্রায় পাঁচ লাখ সরকারি কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এটি ভারতের অর্থনীতিকে তার প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখতে সাহায্য করবে। ভারতের শেয়ার বাজারগুলো এই ঘোষণায় উল্লাস করেছে।

দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বাকযুদ্ধ, বিশেষ করে রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি ক্রয় নিয়ে কেবল তীব্রতর হয়েছে এবং চলতি সপ্তাহের শুরুতে শুরু হওয়া বাণিজ্য আলোচনাও বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কারোপ বিশ্বের বৃহত্তম এবং দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মতো। মাত্র কয়েক মাস আগেও এমন পরিস্থিতি কল্পনাও করা যেত না।

সূত্র: রয়টার্সবিবিসি

Read Entire Article