শেকলবন্দি আকাশ ফিরতে চায় পড়ার টেবিলে

7 hours ago 3

আকাশের বয়স সবেমাত্র ১৭ বছর। যে বয়সে পড়ার টেবিলে মনোযোগ দেওয়ার কথা, বিকেল হলে মাঠে খেলাধুলা করার কথা। ঠিক সেই সময়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে শেকলবন্দি জীবনযাপন করেছে সে। পরিবার বলছে, সঠিক চিকিৎসা করাতে পারলে আকাশ ফিরবে তার স্বাভাবিক জীবনে। এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিকিৎসার ব্যয় বহনের কথা জানিয়েছেন।  

আকাশ কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার পশ্চিম খরখরিয়া এলাকার সাজু মিয়া ও আকলিমা দম্পতির সন্তান।  

জানা গেছে, প্রায় ২ বছর থেকে আকাশ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এর মধ্যে একটা সময়ে সে হারিয়ে যায়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়। ভালো চিকিৎসার অভাবে কখনো ভালো আবার কখনো অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে আকাশ। গত তিন মাস ধরে লোহার শিকল পরে বাড়িতে বন্দি অবস্থায় চলছে তার জীবন। এর আগেও তার পায়ে পরানো হয়েছিল রশি। এতে কেটে গিয়েছিল পা। পরে সেটি খুলে এবার লাগানো হয়েছে লোহার শিকল। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ছেলেটিকে আমরা ছোটবেলা থেকেই চিনি। খুব ভালো ছেলে, দুই বছর আগে হঠাৎ করে তার মানসিক রোগ দেখা দেয়। পরে চিকিৎসা করার পর একটু ভালো হয়। গত তিন মাস থেকে মানসিক সমস্যা বেশি দেখা যাওয়ায় পায়ে শেকল পরিয়ে রেখেছে তার পরিবার। আমরা স্থানীয়ভাবে অনেক সহযোগিতা করেছি। যদি কোনো বিত্তবান এগিয়ে আসে তাহলে ছেলেটিকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সম্ভব।

মুকুল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ছেলেটা এমনিতে খুবই ভালো। এমন অবস্থা কীভাবে যে হলো, তা আমরা নিজেও জানি না। তার বাাব কৃষি কাজ করেন। তেমন ভালো কিছু খাবারও জোগাড় করতে পারে না, চিকিৎসা তো দূরের কথা। তবে আমার মনে হয়, ভালো চিকিৎসা করলে ছেলেটি সুস্থ হতো।

আকাশ জানায়, সুস্থ হয়ে পড়াশোনা করতে চায়। তাই সে সবার কাছে দোয়া চেয়েছে। 

আকাশের মা আকলিমা জানান, ছেলের মাথার সমস্যা, ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলে, আটকানো যায় না। ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাই বাধ্য হয়ে তিন মাস থেকে ছেলেকে শেকল পরিয়ে রাখতে হচ্ছে। 

আকাশের বাবা সাজু মিয়া জানান, দিনমজুরের কাজ করে ছেলের পেছনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজারের কাছাকাছি টাকা খচর হয়েছে। দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালানই কষ্টসাধ্য। এর মধ্যে বড় ছেলে ঢাকায় থাকে, মেয়েও বিয়ে দিয়েছি। এখন এই ছেলের চিকিৎসা ভালো জায়গায় করাতে পারলে সুস্থ হয়ে উঠত। সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন এই পিতা। 

চিলমারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অ.দা) নাজমুল হাসান কালবেলাকে বলেন, আমাদের পক্ষ হতে আকাশকে প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়া হবে। এ ছাড়াও প্রতিমাসে তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হবে।

Read Entire Article