কৃষি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে আগ্রহী বিদেশি শিক্ষার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে গড়ে প্রতিবছর ১১ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে আসছিলেন, যা সামগ্রিকভাবে ৫০ জনের ওপরে। তবে ২০২০ সালের পরে থেকে আকস্মিকভাবে কমতে থাকে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা, যেটি বর্তমানে এসে নেমেছে শূন্যের কোঠায়।
মূলত ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা কমতে শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকে মোট বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন ৫২ জন। তাদের সবাই ছিলেন কৃষি ও এএসভিএম অনুষদের শিক্ষার্থী।
২০১৬ সালে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হন ৯ জন, ২০১৭ সালে ১১ জন, ২০১৮ সালে ১৬ জন, ২০১৯ সালে ১৪ জন, ২০২০ সালে মাত্র দুজন। এর পরবর্তী বছরগুলোতে ভর্তির সংখ্যা নেমে আসে শূন্যের কোঠায়।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা কয়েকটি সূত্রের মতে, বিগত সময়ে তৈরি হওয়া প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা এবং করোনাকালীন জটিলতাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহী হওয়ার মূল কারণ। এছাড়া সেশনজট, গবেষণার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব এবং পর্যাপ্ত ব্যাবহারিক সুবিধা না থাকায় ভর্তির ক্ষেত্রে আগ্রহ হারাচ্ছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর মতে, ভর্তিপ্রক্রিয়া বছরের শেষ ভাগে হওয়ায় অনেকটা সময় নষ্ট হয়। এ কারণেও অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী আগ্রহ হারাচ্ছেন।
আরও পড়ুন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, বিগত প্রশাসন বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি খুব বেশি মনোযোগী ছিল না এবং তাদের ভর্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। করোনার সময় আটকা পড়া নেপালি শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগে দেশে ফিরতে হওয়ায় সে সময় বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়টির এএসভিএম অনুষদের পঞ্চম বর্ষে অধ্যয়নরত নেপালি শিক্ষার্থী মহেশ্বর ভগত মালী বলেন, আমাদের নেপালি শিক্ষার্থীদের অন্যতম আগ্রহের জায়গাজুড়ে কৃষি এবং কৃষিবিষয়ক পড়াশোনা। এর অন্যতম কারণ নেপালে কৃষির গুরুত্ব। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বেশ পরিচিত নেপালের শিক্ষার্থীদের কাছে। তবে বিগত কয়েক বছরের সেশনজট বিরূপ প্রভাব তৈরি করেছে। তা ছাড়া ল্যাবের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, গবেষণা কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি পাওয়া উচিত।
এছাড়াও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আবাসন ব্যবস্থা কিংবা কোনো আবাসিক হলের নির্দিষ্ট ফ্লোর বরাদ্দ থাকা উচিত বলেও মনে করেন এই নেপালি শিক্ষার্থী।
একাডেমিক অ্যান্ড স্কলারশিপ বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ হরি কমল দাশ বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভালো দিক। ২০১৬ সাল থেকে বাইরের দেশের শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে এলেও গত তিন বছরে বন্ধ হয়ে গেছে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি, যা আমাদের জন্য কিছুটা উদ্বেগের। তবে প্রশাসনিকভাবে মনোযোগী হলে আগের চেয়েও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। প্রশাসনিকভাবে এরই মধ্যে এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আব্দুল লতিফ বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি কমেছে গত কয়েক বছরে। আমরা কারণগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সাইদ আহম্মদ/এসআইটি/এমএস