শেখ হাসিনা ভারতে বসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন : মেজর হাফিজ

3 hours ago 5
ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। বৃহস্পতিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে ‘বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ সভায় এ কথা বলেন। মেজর হাফিজ বলেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে বসে এদেশকে আনস্টেবল সিচুয়েশনে নেওয়ার জন্য, এদেশকে ধ্বংস করতে যেটুকু তিনি বাকি রেখেছেন সেটি পূর্ণ করার জন্য নতুনভাবে এ ফ্যাসিস্ট দল (আ.লীগ)-কে নিয়ে মাঠে নামতে চান। অবিলম্বে এখন প্রয়োজন বাংলাদেশে সকল দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে চাই। বিশেষ করে যে ছাত্রসমাজ অংশগ্রহণ করেছে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে তাদের এবং হাসিনা বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য আমরা গড়ে তুলতে চাই। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির ভাঙচুরের ঘটনার প্রসঙ্গে হাফিজ উদ্দিন বলেন, গতকালকে (বুধবার) যে ঘটনা ঘটেছে সেটি এখনো চলমান, সেটি এখনো শেষ হয় নাই। এটি কারা করছে এই তথ্য আমাদের কাছে নেই। এতে সরকারের কি ভূমিকা ছিল সেই তথ্যও আমাদের কাছে নেই। সুতরাং আমরা অল্প কিছু সময় আশা করব- আজকের দিনের মধ্যে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, কারা এজন্য দায়ী- সকল পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেলে আমরা এই সম্পর্কে বিএনপির পক্ষ  থেকে প্রতিক্রিয়া মিডিয়ার সামনে জনগণের সামনে প্রকাশিত করব। অপূর্ণ তথ্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সঠিক নয়। তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি, এগুলো গণতন্ত্রকে ধবংস করার জন্য, আগামী দিনে গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্য কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে পারেন। বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আছে তা জানার চেষ্টা করব। ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির ছয় মাস পূর্তির দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি থেকে এই ভাঙচুর শুরু হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে বাড়ি ভাঙার কাজ চলমান আছে। হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, একাত্তর সালে অনেক যুদ্ধের পর আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পেয়েছিলাম। কিন্ত স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে আমাদের স্বপ্ন ভঙ্গে হলো। যে লক্ষ্য ধারণ করে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার ধীরে ধীরে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্থাপিত হলো একটি একদলীয় রাষ্ট্র। যেখানে সংবাদ পত্র থাকবে না, রাজনৈতিক দল থাকবে না, সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে না। এমন একটি রাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে  এদেশে ১৯৭৫ সালে কায়েম হয়েছিলো। এর নাম হলো আওয়ামী লীগ। এদের কাছে কোনো দেশ নাই। এদের কাছে নিজের দল, নিজের পরিবার, নিজের স্বার্থ, নিজের সম্পদ আহরণ মূল কাজ। আজকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের কত সম্পত্তি জানি না। আমরা মিডিয়াতে মাঝে মধ্যে খবর দেখি- আগে তো জানতাম না যে, শেখ পরিবারেই ৮টি বাগান বাড়ি রয়েছে গাজীপুর এলাকাতে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিয়ন সেখানে ৪’শ কোটি টাকা আয় করেছে, হেলিকপ্টারকে ঘুরে বেড়ায় অপকল্পনীয়। কি ধরনের গণতন্ত্র তারা প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি সরকারকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা আশা করব, এখন অতি দ্রুত এদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। কারণ গণতন্ত্র না থাকার ফলেই নানা ধরনের ঘটনা ঘটে। এদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য অনেক আত্মত্যাগ করেছে। বিশেষ করে আমাদের দল বিএনপি, গত ১৫টি বছর কত মানুষ জীবন দিয়েছে, কত মানুষের জীবন কারা অন্তরালে গিয়েছে, আমাদের যুবকেরা বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে ত্যাগের মাধ্যমে। কিন্তু প্রত্যাশিত গণতন্ত্র এখনো দেখা পাওয়া যায়নি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে বাধা হয়ে কারা দাঁড়ায়? তিনি বলেন, একটি মহল চেষ্টা করে এখন নির্বাচন দলে পরে বিএনপি বিজয়ী হবে। সুতরাং এই নির্বাচনকে যত দীর্ঘায়িত করা যায়। বিএনপি যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এটা তো অপরাধ হতে পারে না। বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার জন্য কেনো নির্বাচন দীর্ঘায়িত করা হবে এটি আমরা বুঝতে অক্ষম। আমি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতি অনুরোধ রাখবো- আপনি দ্রুত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নিন। নির্বাচন হলো গণতন্ত্রের প্রধান অনুষঙ্গ। এই নির্বাচনকে ঠুনকো অজুহাতের কারণে আর দূরে ঠেলে দেবেন না।  স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে এবং সহসভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ বাবলুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, তাঁতী দলের মনিরুজ্জামান মনির, মৎস্যজীবী দলের ইসমাইল হোসেন সিরাজী, স্বাধীনতা ফোরামের সহসভাপতি হাফিজুর রহমান, একেএম রেজাউল করীম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
Read Entire Article