শেখ হাসিনার সব অন্যায়ের সঙ্গে ভারত জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, আর কোনো রাষ্ট্র শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়নি। পার্শ্ববর্তী একটি দেশ সমর্থন দিয়েছে। যে অন্যায়গুলো শেখ হাসিনা করেছে, বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য, কথা বলার অধিকারকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য, গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে শিকড় থেকে উপড়ে দেওয়ার যে প্রচেষ্টা শেখ হাসিনা চালিয়েছেন, প্রত্যেকটির সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত যুক্ত।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরে ছাত্র-যুবক গুম হয়েছে। নদী-নালা, খালবিলের পাশে ক্রসফায়ারের পর অনেক লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। কথা বলার স্বাধীনতা ছিল না, যে কথা বলবে তার জন্য গুম-খুন ও জুলুমের একটি অনুষঙ্গ করে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। আলেম-ওলামারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন। সেই আওয়ামী সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আলেম-ওলামাদের ধরার জন্য মসজিদের ভেতরে বুট জুতা পরে ঢুকে মসজিদকে অপমানিত করেছে।
হেফাজতের সমাবেশের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, সেই সমাবেশে রাতের আধারে লাইট-বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে বৃষ্টির মতো গুলি করে কত আলেম-ওলামাকে হত্যা করেছে, তার হিসাব এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। শেখ হাসিনার পুলিশের কর্মকর্তারা বুক উঁচিয়ে বলতেন, আমরা যেভাবে হেফাজতকে সামলিয়েছি, প্রয়োজন হলে আমরা আবারও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে কোনো আন্দোলনকে সামলাবো।
সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, মাওলানা সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল সেই অভিযোগ যে মিথ্যা সেটা আদালতে বলার জন্য সুখরঞ্জন বালি গিয়েছিলেন। তিনি হিন্দু, কিন্তু সত্য ও ন্যায়ের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের মহাবিপ্লবের পর প্রত্যেকেই ড. ইউনূসকে সমর্থন দিয়েছে। তার ওপর আস্থা রেখেছে। কিন্তু জনপ্রত্যাশা ও জন-আকাঙ্ক্ষার বাইরে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার অন্য এজেন্ডা নিয়ে কাজ করলে মানুষ মেনে নেবে না। এখনো চাল, ডালের দাম কমেনি। গত দুদিনে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। আলু আমাদের এখানেই উৎপাদন হয়। আলুর মৌসুমে ৩-৪ টাকা কেজি ছিল। শেখ হাসিনার কারণে গত মৌসুমে ভারত থেকে আলু আমদানি করতে হয়েছে। এবারো যদি আলু আমদানি করতে হয়, কেজি যদি ৭৫-৮০ টাকা হয়, তাহলে মানুষ বলবে, ‘ইউনূস সরকারকে সমর্থন দিয়ে আমাদের কী লাভ হলো।
নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কেউ কেউ বলছেন, আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা। এটি কি মানুষ বুঝে? তাহলে এই সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে, এটি তো সংস্কার হলো না। একটি রাজনৈতিক দলকে মানুষ ভোট দেবে এবং সেই দল ঠিক করবে যে, কাকে কাকে কী বানাবে। তাহলে তো কেনাবেচা আরও শুরু হবে। সেই কারণে দু-একটি রাজনৈতিক দল আনুপাতিক নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু একজন ব্যক্তি নিজের কিংবা দলের কারণে জনপ্রিয়তা থাকতে পারে। দুটি মিলেই একজন ব্যক্তি বিজয়ী হয়। তাই একজন ভোটার তার পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দেবেন। এই ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।
ওলামা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা সেলিম রেজার সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ) অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত খালেক।
অনুষ্ঠানে বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল প্রধান বক্তা ও ওলামা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কাজী মাওলানা মো. আবুল হাসেন বিশেষ বক্তা ছিলেন।
সাখাওয়াত হোসেন/জেডএইচ/জেআইএম