২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় পঞ্চম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। এদিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। তিনি এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির সর্বোচ্চ সাজার দাবি করেন।
সেইসঙ্গে আসামিদের অবৈধ সম্পত্তি ক্রোক করে গণঅভ্যুত্থান ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবি জানান চিফ প্রসিকিউটর।বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এদিন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল–১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে পঞ্চম দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়। প্যানেলের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এর আগে রোববর (১২ অক্টোবর) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় প্রথম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। পরের দিন সোমবার (১৩ অক্টোবর) ও মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এবং বুধবার (১৩ অক্টোবর) পর পর
চারদিন যুক্তিতর্ক বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
এরও আগে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে এ যুক্তিতর্ক সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বলে গত শনিবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জানান প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম। তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে চলে যাবে।
এর আগে গত বুধবার ( ৮ অক্টোবর) শেষ ও ৫৪তম সাক্ষী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার মো. আলমগীরের জেরা শেষে ট্রাইব্যুনাল-১ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য রোববার দিন ধার্য করেন।
ঐতিহাসিক এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া ‘স্টার উইটনেস বা তারকা সাক্ষী’ হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। সর্বমোট সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন।
মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস এইচ তামিম শুনানি করছেন। সেই সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত থাকেন। পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মামলায় গ্রেফতার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। একপর্যায়ে মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ৩ আগস্ট থেকে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে ৮ অক্টোবর শেষ হয়।
এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার উপ-পরিচালক মো. জানে আলম খান। পরে তদন্ত করেন উপ-পরিচালক মো. আলমগীর। সার্বিক সহযোগিতা করেন বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা। তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর চলতি বছরের ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে গত ৩১ মে সম্পূরক অভিযোগ দেওয়া হয়। গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।
এফএইচ/এসএইচএস/জেআইএম