পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা নয় দিনের ছুটি শেষে রোববার (৬ এপ্রিল) থেকে দেশের শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন শুরু হয়েছে। তবে ঈদের পর প্রথম কার্যদিবস শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো যায়নি। কারণ লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমেছে। তবে এই পতনের মধ্যে চমক দেখিয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড। প্রায় সবকটি মিউচুয়াল ফান্ডের দাম বাড়ায় বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে শেয়ারবাজার।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে তার আড়াই গুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। ফলে কমেছে প্রধান মূল্যসূচক।
অবশ্য এই দরপতনের মধ্যেও ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৩টির দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। পাশাপাশি বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচকও বেড়েছে।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় রয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এরপরও বাজারটিতে সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবার সরকারি ছুটি নির্ধারিত ছিল ৩০ ও ৩১ মার্চ এবং ১ ও ২ এপ্রিল। এর সঙ্গে সরকারের নির্বাহী আদেশে ৩ এপ্রিল ছুটি থাকে। ছুটি শেষে ৪ ও ৫ এপ্রিল ছিল শুক্রবার ও শনিবার। অন্যদিকে ছুটি শুরু হওয়ার আগে ২৮ ও ২৯ মার্চ ছিল শুক্রবার ও শনিবার। ফলে ঈদ উপলক্ষে টানা ৯ দিন ছুটি মিলে যায়।
এই লম্বা ছুটি শেষে রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায়। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের বড় পতন হয়। এ পরিস্থিতিতে দাম কমার তালিকা থেকে বের হয়ে একের পর এক মিউচুয়াল ফান্ডের দাম বাড়তে থাকে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকে। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমলেও দাম বাড়ার তালিকায় স্থান হয় প্রায় সবকটি মিউচুয়াল ফান্ডের।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ১০১টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৬২টির। আর ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্যদিকে ৩৩টি মিউচুয়াল ফান্ডের দাম বাড়ার বিপরীতে মাত্র ২টির কমেছে। বাকি দুটির মধ্যে একটি লেনদেন হয়নি অন্যটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার পরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২০৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ দশমিক ২৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
প্রধান মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩১৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৯৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ৩০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা শাইনপুকুর সিরামিকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ২৭ লাখ টাকার। ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিচ হ্যাচারি।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইস্টার্ন হাউজিং, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, উত্তরা ব্যাংক এবং এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৭৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৪টির এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
এমএএস/এমআইএইচএস/জেআইএম