শেরপুরে বাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন ১১ পরিবারের বসতভিটা

2 hours ago 3

টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে বিলীন হয়েছে ১১ পরিবারের বসতভিটা। পরিবারগুলো সহায়সম্বল নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক বিদ্যালয়ে।

এদিকে পাহাড়ি ঢলে ভেসে আসা গাছ ধরতে গিয়ে নিহত মো. ইসমাইল হোসেন (১৭) নামে এক কিশোরের পরিবারকে নগদ ২৫ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ওই কিশোরের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের হাতে সহায়তা তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল।

শেরপুরে বাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন ১১ পরিবারের বসতভিটা

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বেলা দেড়টার দিকে মহারশি নদীর ব্রিজ সংলগ্ন খৈলকুড়া এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। একই সঙ্গে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাড় উপচে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর বাজারে পানি প্রবেশ করে। এতে এক মুহূর্তে ভেসে যায় অন্তত ১১টি পরিবারের বসতভিটা। ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি, ভেসে যায় ৫০টিরও বেশি মাছের ঘের। পানিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয় ৩৪৫ হেক্টর জমির আমন ধান ও ১০ হেক্টর সবজিক্ষেত। এছাড়া আংশিকভাবে নিমজ্জিত হয় ৫৭৫ হেক্টর জমির আমন ধান ও ২৫ হেক্টর সবজিক্ষেত। এতে একদিনেই সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে অনেক পরিবার।

আরও পড়ুন:

সেচযন্ত্র থেকে অবৈধ সংযোগ, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেলো দিনমজুরের
৭০ শতাংশ জনগণ পিআরের পক্ষে: মতিউর রহমান আকন্দ
ফরিদপুরে ছেলেকে গলা কেটে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যা

খৈলকুড়া এলাকার বিধাবা নারী রহিমা বেগম ভাঙা বাঁধের ধারে দাঁড়িয়ে আর্তনাদ করে বলেন, ‘আল্লাহ আমার সব কিছু নিয়ে গেছে, সব শেষ হয়ে গেছে, আমি এহন কই যামু? ফসল আবাদ নাই, ঘর নাই, মাছা বাইধি রাখার জায়গা নাই। বাপ-দাদার কষ্টের সব শেষ।’

তিনি জানান, গত দুই বছরে তিনবার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ঘরবাড়ি। এবারও মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিয়েছে পাহাড়ি ঢল। ভেসে গেছে তার দু’টি ঘর, ফসলি জমি, সব আসবাব। স্বামী মারা গেছেন ২৫ বছর আগে, অন্যের জমিতে চাষাবাদ আর দিনমজুরির আয়ে কোনোরকম সংসার চলতো। ঢলের পর পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই নেই তার।

শেরপুরে বাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন ১১ পরিবারের বসতভিটা

বণিক সমিতির সভাপতি মো. মোখলেছুর রহমান খান বলেন, প্রত্যেক বছরই বর্ষা মৌসুমে মহারশি নদীর পানিতে প্লাবিত হয়ে বাজারের শতশত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি হঠাৎ নেমে আসা বন্যায় ডুবে যায় অনেক দোকানপাট, নষ্ট হয় মালামাল। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে মহারশি নদীর পাশে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, দোকানঘরের মেঝে উঁচু করা, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও বাজার এলাকায় টেকসই ড্রেন নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ২০২২ সালের ঢলে ব্রিজ পাড়ের এই বাঁধ ভেঙে গেলেও সংস্কার হয়নি। তাই এ বছর আবারও একই জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, আমরা বারবার বলেছি কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবস্থা নেয়নি। আজ সব ভেসে গেছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান বলেন, মহারশি নদীর স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, বৃষ্টি না থাকায় নদীর পানি কমে এসেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সহায়তা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। এছাড়া স্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে অবগত করা হয়েছে।

মো. নাঈম ইসলাম/এমএন/এমএস

Read Entire Article