রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ১৭ বছরেও হয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের দখলে ছিল গোটা ক্যাম্পাস। তাদের হাতে নির্যাতন, হয়রানি ও চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগের একচেটিয়া আধিপত্যের কারণে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের কথা বলার মতো সাহসও ছিল না কারো।
তবে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে অধিকার আদায়, গণতান্ত্রিক চর্চা, ন্যায্য দাবি আদায়সহ বিভিন্ন কারণে ছাত্রসংসদের দাবি জানিয়ে আসছেন। গত ২৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এ বিশ্ববিদ্যালয়েও কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি আরও জোরালো হয়ে উঠে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের কোনো বিধান রাখা হয়নি। যার কারণে নির্বাচন করতে হলে প্রথমে ছাত্রসংসদ আইনের খসড়া অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে পাস করে সেটি অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের কাছে পাঠাতে হবে। বিধানটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সংযুক্ত হলে তারপরে ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে। শিক্ষার্থীদের ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবির প্রেক্ষিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের নীতিমালা যুক্ত করার জন্য কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।
ছাত্রসংসদ আইনের খসড়া অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে পাস করে সেটি অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের কাছে পাঠাতে হবে। বিধানটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সংযুক্ত হলে তারপরে ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে। শিক্ষার্থীদের ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবির প্রেক্ষিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের নীতিমালা যুক্ত করার জন্য কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।
বেরোবির জনসংযোগ দপ্তর থেকে জানা যায়, ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট কর্তৃক ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নীতিমালা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর (রাষ্ট্রপতি) কর্তৃক অনুমোদনের জন্য ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রসংসদ নির্বাচনের নিমিত্তে ছাত্র সংসদ-সংক্রান্ত স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসাব নম্বরে অর্থ সংরক্ষণ করা, ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নীতিমালা অনুমোদন হলে যথা শিগগির ছাত্রসংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।
- আরও পড়ুন
- বেরোবি শিক্ষার্থীরা লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে জড়ালে আজীবন বহিষ্কার
- বেরোবিতে চালু হচ্ছে রোল ও নামহীন খাতা মূল্যায়ন
- আবু সাঈদ হত্যা: ৮ মাস পর মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বেরোবি প্রশাসন
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সচেতন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তাদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও সমাবেশে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের জোরালো দাবি তুলে ধরছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট কর্তৃক ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নীতিমালা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর (রাষ্ট্রপতি) কর্তৃক অনুমোদনের জন্য ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
এসএম আশিকুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি ছিল ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ছাত্রসংসদ নির্বাচন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে ও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ এখনো দেওয়া হয়নি। ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই। দ্রুত সব জটিলতা কাটিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী আহমাদুল হক আলবির বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সহিংসতা, দখলদারিত্ব এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মতো ঘটনাগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি ও অনীহা সৃষ্টি করেছে। ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করতে বিরোধীদের দমন এবং ছাত্রসংসদ নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছিল। ছাত্রসংসদ নির্বাচন চালু থাকলে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি হতো এবং একক আধিপত্য বিস্তার করা কঠিন হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এতে ক্যাম্পাসে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকবে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত প্রকাশ করার সুযোগ পাবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশ্বাস দিলেও দীর্ঘদিন সময় নিয়ে ছাত্রসংসদের বিষয় অগ্রসর কিছু না দেখিয়ে ওনাদের ব্যর্থতা প্রকাশ করছে। প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।’
নতুন বিধি প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। কমিটি সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে একটি খসড়া সংবিধি দেয়। সেটি ছাত্র-শিক্ষক, শিক্ষার্থী কর্মকর্তাসহ সবার সম্মতিক্রমে পরিবর্তন পরিমার্জন করা হয়। আমরা সেটি সিন্ডিকেটে পাশ করি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠিয়েছি।’
তানভীর হাসান দিপু নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একটি দেশের পার্লামেন্ট দেশের মানুষের জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমি মনে করি, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের জন্য ছাত্রসংসদ ঠিক ততটাই ভূমিকা রাখে।’
আরেক শিক্ষার্থী মো. শামসুর রহমান সুমন বলেন, ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় দেশের বিপ্লবী ধারায় উজ্জীবিত এক অনন্য ক্যাম্পাস। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছে আমরা সেটিকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু গণতান্ত্রিক চর্চা ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য আগামী ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে বেরোবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্র সংসদ করার জন্য কোনো সংবিধি ছিল না। তাই নতুন বিধি প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। কমিটি সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে একটি খসড়া সংবিধি দেয়। সেটি ছাত্র-শিক্ষক, শিক্ষার্থী কর্মকর্তাসহ সবার সম্মতিক্রমে পরিবর্তন পরিমার্জন করা হয়। আমরা সেটি সিন্ডিকেটে পাশ করি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি সংবিধি নতুনভাবে সংযোজন করতে হলে তার অনেকগুলো প্রক্রিয়া পার করতে হয়। আমাদের প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের দাবির আগেই শুরু করেছি। আমরা আশা করি, শিগগির এটি সম্পন্ন করতে পারব এবং ছাত্র সংসদের সংবিধি পূর্ণাঙ্গ পাশ হয়ে আসবে।’
ফারহান সাদিক সাজু/আরএইচ/এএসএম