শেষ সময়ে দম ফেলার ফুরসত নেই কামারপাড়ায়

3 months ago 8

একদিন পরই ঈদুল আজহা। কোরবানি ঘিরে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন টাঙ্গাইলের কামার শিল্পীরা। কামারপাড়া এখন টুং টাং শব্দে মুখর। চলছে হাপর টানা, পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। কামাররা হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করছেন দাঁ, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম। কামারদের যেন দম ফেলারও সময় নেই।

জানা যায়, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জেলার ১২টি উপজেলা ও ১১টি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার সরঞ্জাম। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও এখন ব্যস্ত সময় পাড় করছেন তারা। কামাররা হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম। আবার মোটর চালিত মেশিনে শান দেওয়ার কাজও চলছে। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় তাদের কাজ এখন বেড়েছে। দিনরাত পরিশ্রম করছেন তারা। তাদের এ ব্যস্ততা চলবে ঈদুল আযহার দিন পর্যন্ত।

টাঙ্গাইলে শহরের কামারপল্লির কারিগররা জানান, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কামারদের ব্যস্ততা বেড়েছে অনেক। কাজের চাপে যেন দম ফেলার সময় নেই। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছেন কামাররা। তবে কয়লা ও লোহার দাম অনেক বেশি। তাই তৈরিকৃত সরঞ্জাম বিক্রি বেশি হলেও লাভ কম হয়।

কারিগররা জানান, বর্তমানে পশুর চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ১০০ থেকে ২০০ টাকা, দা ২৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বঁটি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা, চাপাতি ৪০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজি উপরের নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হয়।

টাঙ্গাইল শহরের পার্ক বাজারের ব্যবসায়ী সত্যরঞ্জন দাস জাগো নিউজকে বলেন, প্রথম দিকে বিক্রি কম হলেও শেষ সময়ে ভালোই বিক্রি হচ্ছে। তবে জিনিসের দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতার সংখ্যাও কম।

শেষ সময়ে দম ফেলার ফুরসত নেই কামারপাড়ায়

তিনি আরও বলেন, আমি ৪০ বছর এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছি। সারাবছর কা না হলেও বর্তমানে পুরো দমে বিক্রি হচ্ছে।

একই বাজারের ব্যবসায়ী আনন্দ কর্মকার জাগো নিউজকে বলেন, ৩৫ বছর ধরে আমি এ পেশায় কাজ করছি। গত বছরের চেয়ে এবার আমাদের ব্যবসা কম হচ্ছে। তবে আশা করছি আগামী দুইদিন বিক্রি ভালোই হবে।

জুনু নামের এক কারিগর জাগো নিউজকে বলেন, আগের থেকে ব্যবসা ভালোই হচ্ছে। তবে চাইনিজ ছুরি ও কুড়ালের কারণে আমাদের বিক্রি কম চলছে। শেষ সময়ে রাত দিন সমানতালে কাজ করছি।

প্রভাত চন্দ্র দাস ও রুদ্র সরকার জয় বলেন, প্রতিবছর কোরবানির ঈদে আমরা বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম তৈরি করে থাকি। এবারও এসব সরঞ্জামের চাহিদা বেড়েছে। সারাবছর আমরা যে আয় করি কোরবানি ঈদের এক মাসে তার চেয়ে বেশি আয় করতে পারি।

তিনি আরও বলেন, কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি হচ্ছে কয়লা। কিন্তু এ কয়লা এখন প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে কয়লা সংগ্রহ করতে হয়। বর্তমানে কয়লার দামও অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লোহার দামও। লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সেই তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি।

ক্রেতা শামিম আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, মাংস কাটার জন্য ৪টি ছুরি ও দুটি চাপাতি নিয়েছি। এতে মোট দুই হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়েছে। দাম ঠিকই মনে হচ্ছে।

আরেক ক্রেতা মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, ছুরি ও চাপাতি কিনেছি। আগের থেকে দাম বেশি মনে হচ্ছে।

এমএন/এমএস

Read Entire Article