নেগেটিভ ইক্যুইটিকে শেয়ারবাজারের বিগেস্ট ক্যানসার হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। এই নেগেটিভ ইক্যুইটি সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আশ্বাস দেন।
আনিসুজ্জামান বলেন, নেগেটিভ ইক্যুইটি বিষয়টি আমি প্রথম শুনলাম। আজ প্রথম জানলাম নেগেটিভ ইক্যুইটি আছে। আমরা বিদেশে থাকতে ট্যাক্স বইতে এ ধরনের শব্দ পাইনি। ট্যাক্স বইতে যা নেই, তার সমাধানও নেই।
তিনি বলেন, সবার কাছ থেকে একটা লিখিত কমিটমেন্ট নেবো কে কী অবস্থায় আছে। তখন আমরা একটা সমাধানের চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ আমরা কাজটা করে যাবো, আপনারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দিন-রাত শেয়ারবাজার নিয়ে চিন্তা করে যাচ্ছেন। এটা আগের সরকার করেছে কি না আমি জানি না। আমার কাছে মনে হয় এখানে শেয়ারবাজারকে অর্থনীতির মূল ধারার অংশ মনে করেনি আগের কোনো সরকার।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, আমরা প্রথম দিন থেকে নেগেটিভ ইক্যুইটি নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ করছি। এটার নানান অপশন নিয়ে কাজ করছি। এখন ব্যাংকগুলোর যে অবস্থা সেখানে সরকারের পার্টিসিপেশন লাগছে। সুতরাং নেগেটিভ ইক্যুইটিতেও সরকারের অ্যাকটিভ পার্টিসিপেশন লাগবে। নেগেটিভ ইক্যুইটি নিয়ে আমরা একটা স্টেপ এগিয়েছি। আমরা সব কোম্পানিকে বলেছি তাদের সিচ্যুয়েশন বুঝে একটা প্লান দিতে।
তিনি বলেন, এটা একটা বিগেস্ট ক্যানসার এই ইন্ডাস্ট্রির জন্য। এটাকে যতদিন আমরা চিহ্নিত না করবো ততদিন ভালোভাবে ক্যাপিটাল মার্কেটকে এগিয়ে নিতে পারবো না। নেগেটিভ ইক্যুইটিকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে আরও ৪ থেকে ৫ বছর। কিন্তু আমরা কীভাবে চলবো সেই রোডম্যাপটা আমাকে ঠিক করে নিতে হবে।
- আরও পড়ুন
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে অনেকে সর্বস্বান্ত: তপন চৌধুরী
টানা ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার, ৪০০ কোটি টাকা ছাড়ালো লেনদেন
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, গত ১৫ বছরে আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট পিছিয়ে গেছে। ১০ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানি ২৭৫ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে। তবে এটা রিকভারি করতে কাজ করছি।
মিউচুয়াল ফান্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের স্তম্ভ মিউচুয়াল ফান্ড। আমাদের বাজারে তার প্রভাব খুবই কম। আমরা জানি দেশের মিউচুয়াল ফান্ডের কী অবস্থা? কীভাবে কী হয়েছে, কারা করেছে? তাই আগামী দিনে মিউচুয়াল ফান্ড রুলসকে কীভাবে আরও শক্তিশালী করা যায়, টাস্কফোর্সের মতামতের ভিত্তিতে কাজ চলছে।
তিনি বলেন, সরকারের প্রধান অঙ্গীকার জবাবদিহি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির যৌথ টাস্কফোর্স করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে এ যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। তারা কোম্পানিগুলোকে ব্যাংকমুখী থেকে ফিরিয়ে শেয়ারবাজারমুখী করতে কাজ করবে। এটা শুধুমাত্র বিএসইসির কাজ নয়। এই বাজারের জন্য ৪টি নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অনেক কিছু করার আছে। এখানে আইডিআরএ ও এফআরসি বাজারের বড় একটি অংশ।
অনুষ্ঠানে আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, জাঙ্ক শেয়ার দিয়ে বাজার বাড়লেও এটা স্থায়ী হয় না, ভালো শেয়ার শেয়ারবাজারে আনতে হবে। ভালো কোম্পানিকে অফ লোড করতে হবে। সরকারের উচ্চমহল জানে এটা এভাবে হবে না, এটাকে বড় করতে হবে। এ দেশের অর্থনীতির জন্য স্টক মার্কেট দরকার।
ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, বাজেটে আমাদের কিছু প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। তবে আমাদের কোম্পানিগুলোর ফাইন্যান্সিয়াল এস্টেটমেন্ট যদি স্বচ্ছ না হয় তাহলে কোনো কিছুতেই বাজার ভালো হবে না।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, কোনটা বিনিয়োগ আর কোনটা ব্যবসা সেটা যদি আমরা বুঝতে না পারি তাহলে হবে না। মার্কেটকে মার্কেটের মতো চলতে দিতে হবে।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ কোম্পানির চেয়ারম্যান (সিডিবিএল) তপন চৌধুরী বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এটা কারও কাম্য নয়।
ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এফআইসিসিআই সভাপতি জাভেদ আক্তার, ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন প্রমুখ।
এমএএস/কেএসআর/জেআইএম