ভরা মৌসুমে সার না পেয়ে বিপাকে আমন চাষিরা। সার সংকটের মধ্যেই সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়াতে চায় বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। তাদের দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে আগামী ৬ অক্টোবর গণশুনানি আহ্বান করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি। তবে ওই শুনানিতে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাব।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার কৃষক ফুলজার হোসেন বলছিলেন সার সংকটের কথা। তিনি বলেন, ‘এক একর ৩৫ শতক জমিতে আমন ধান রোপণ করেছি। কিন্তু এসময় সারের দরকার। বিভিন্ন দোকানে ঘুরে এক হাজার ৪৪৫ টাকা দরে দুই বস্তা সার নিয়েছি। ডিলারদের কাছে সার নেই। খোলা বাজারে বেশি দামে কিনতে হয়।’
আরও পড়ুন:
কুড়িগ্রামে সার সংকটে দিশেহারা আমনচাষিরা
সার তুলছেন না ডিলার, সংকটে কৃষক
সার আমদানিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ, মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা
সার সংকট নিয়ে সম্প্রতি কুড়িগ্রামে ‘রাষ্ট্র সংস্কার কৃষক আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ করে। আন্দোলনকারী ভূরুঙ্গামারীর কৃষক আজহার আলী বলেন, ‘এখানকার ডিলার কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করতে চান না। আমরা সার কিনতে গেলে টালবাহানা করেন। কিন্তু সেই সার খোলা বাজারে বেশি দামে কিনতে হয়। বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করি।’
কৃষক ফুলজার ও আজহার আলীর মতো দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকরাও ভুগছেন সার সংকটে। যেখানে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে আমন চাষের জন্য সারের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
সার পাওয়া নিয়ে এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সার কারখানায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে দেওয়া পেট্রোবাংলার প্রস্তাব নিয়ে আগামী ৬ অক্টোবর গণশুনানি আহ্বান করেছে বিইআরসি। তবে ওই শুনানিতে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ক্যাব। বিইআরসির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছে সংস্থাটি।
তারা বলছে, লোক দেখানো শুনানিতে অংশ নেবে না ক্যাব। বিইআরসির বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ ছাড়া শুনানিতে অংশ নেবে না তারা। দেড় মাস আগে তাদের অপসারণ চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠিও দেয় ক্যাব।
এদিকে, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনকে গণশুনানিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, বিইআরসি দাম নাও বাড়াতে পারে কিন্তু আলোচনা তো করতে হবে। সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়লেই যে সারের দাম বাড়বে, এটি সঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
৬ অক্টোবর শুনানিতে অংশীজনদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ১১ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিইআরসি। বক্তব্য দেওয়ার তালিকায় নাম দিতে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।
ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, আইন অনুযায়ী উন্মুক্ত শুনানির মাধ্যমে স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে জ্বালানির দাম নির্ধারণ হওয়ার কথা থাকলেও প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মত নেওয়ার প্রক্রিয়াটি তারা একেবারে তুলেই দিয়েছে। নির্বাহী আদেশে সব সিদ্ধান্ত এখন চেয়ারম্যানই নেয়, বলেন তিনি।
উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি কিংবা সিস্টেম লস কমাতে ব্যবস্থা না নিয়ে গ্রাহকপর্যায়ে দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের ওপরই বারবার দায় চাপানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলছেন, তারা শুনানি করলেও দাম বাড়াবে, না করলেও বাড়াবে। ১২-১৪ বছর ধরে তারা এই কাজই করে আসছে। তাদের এই অপকর্ম এবং অবৈধ ক্ষমতা চর্চার বাস্তবায়নে ক্যাব সহায়তা করতে পারে না।
দেশে সারের মোট চাহিদার বেশিরভাগই মূলত আমদানি নির্ভর। দেশের কারখানাগুলোয় উৎপাদিত কিছু ইউরিয়া সার ছাড়া প্রায় সবই আমদানি করা হয়।
আরও পড়ুন:
এক লাখ ৪০ হাজার টন সার কিনবে সরকার, ব্যয় ১০৪০ কোটি টাকা
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে দেশে রাসায়নিক সারের চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ টন। মোট চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশই আমদানি নির্ভর।
এসএনআর/এমএমএআর/এমএস