‘সকাল-সন্ধ্যা মশা ইচ্ছামতো কামড়াচ্ছে’

2 hours ago 3

‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন মশা নিধনের কার্যক্রম শুরু করেনি। অথচ সকাল-সন্ধ্যা মশা ইচ্ছামতো কামড়াচ্ছে। মশার যন্ত্রণায় বাসাবাড়িতে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে মশার উপদ্রব কয়েকগুণ বাড়ে।’

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে জাগো নিউজকে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নগরীর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের চর কালিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মো. ছামাদ।

স্থানীয়রা জানায়, ময়মনসিংহ নগরীতে ভয়ানক হারে মশার উপদ্রব বেড়েছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সন্ধ্যা নামলেই ঘর-বাইরে শুরু হয় মশার রাজত্ব। শহরের বাসা-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, কোনো জায়ায় মশার থেকে রেহাই নেই তাদের।

এদিকে নগরে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। চলতি মাসে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে।

জানা গেছে, গত ২২ অক্টোবর বিকেল চারটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু আক্রান্ত আনোয়ারুল হক (৭২) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি নগরের নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) পর্যন্ত হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ৮৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ জন পুরুষ, ২১ জন নারী ও ৪ জন শিশু। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতালটিতে মোট ১ হাজার ৩৫৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১১ জন। জানুয়ারিতে একজন, সেপ্টেম্বরে ৫ জন এবং চলতি অক্টোবর মাসে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই বছরের মধ্যে চলতি মাসেই ৬৬০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ২৪টি শয্যা থাকলেও প্রতিদিন কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকছেন।

নগরবাসীর অভিযোগ, মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। নিয়মিত ফগার মেশিনে স্প্রে করা হয় না, ড্রেন পরিষ্কার ও লার্ভা নিধনেও নেই কার্যকর পদক্ষেপ। ফলে ড্রেনের স্থির পানিতে মশার বংশবিস্তার বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ায় সম্প্রতি তাড়াহুড়া করে মশা নিধনের কার্যক্রম শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। সব এলাকায় কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। মশা মারতে যে ধোঁয়া ছাড়া হচ্ছে, তাতে মশা মরছে না। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আগে সিটি করপোরেশন মশা নিধনে উদাসীন ছিল। এতে নাগরিকরা ক্ষুব্ধ।

নগরবাসীর দাবি, নিয়মিত ও কার্যকর মশা নিধন অভিযান চালাতে হবে, ড্রেন ও নালা পরিষ্কারের কাজ জোরদার করতে হবে এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে লার্ভা নিধন কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিকরা মশা নিধনে এখন কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চায়।

নগরীর কপিখেত এলাকার বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, সন্ধ্যার পর ঘরে বসে থাকা দায়। কয়েল জ্বালিয়ে, ইলেকট্রিক ব্যাট মারলেও মশা কমে না। শিশুরা রাতে ঘুমাতে পারে না, দিনে স্কুলে ক্লান্ত থাকে।

নাহা রোড এলাকার গৃহিণী আসমা খাতুন বলেন, মশা মারার ওষুধের গন্ধ পাওয়া যায়, কিন্তু মশা কমে না। উল্টো মশার উপদ্রব বাড়ছেই। ছোট বাচ্চা আছে, ডেঙ্গুর ভয় সবসময় তাড়া করে। দ্রুত ও টেকসই সমাধান চাই। শুধু ফগিং নয়, প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন- নাহলে মশার সঙ্গে এই যুদ্ধ চলবে বছরজুড়েই।

সিটি করপোরেশন বলছে, ইতোমধ্যে মশা নিধনের ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে। মাইক দিয়ে সচেতনতামূলক বার্তা ও লিফলেট ছড়ানো হচ্ছে। ড্রেনের কাদা-ময়লা ও ঝোপঝাড় অপসারণসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এইচ কে দেবনাথ বলেন, বাড়ির ছাদে বা টবের নিচে পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। এছাড়া যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলা যাবে না। মশা নিধনে আমাদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান। এক্ষেত্রে জনগণকেও সচেতন থাকতে হবে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. জাকিউল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসক ও নার্সরা আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।

কামরুজ্জামান মিন্টু/এনএইচআর/এএসএম

Read Entire Article