সত্যিই চলে গেলেন ওস্তাদ জাকির হুসেন

3 weeks ago 20

কিংবদন্তি তবলাশিল্পী ওস্তাদ জাকির হুসেন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। আজ (১৬ ডিসেম্বর) সোমবার জাকির হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

পরিবারের পক্ষ েথকে বলা হয়েছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। জাকির হুসেন দীর্ঘদিন রক্তচাপজনিত নানান সমস্যায় ভুগছিলেন। তার ব্যবস্থাপক নির্মলা বাচানী ভারতীয় গণমাধ্যমে বলেন, ফুসফুসজনিত অসুখের কারণে গত দুই সপ্তাহ আগে জাকির হুসেনকে সান ফ্রান্সিসকোর ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গতকাল রোববার রাতে জাকির হুসেনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই সে খবরে শোক প্রকাশ করেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, এনডিটিভিসহ ভারত ও ভারতের বাইরের বেশ কিছু গণমাধ্যমও খবরটি প্রচার করে। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শোক প্রকাশের কথাও জানানো হয়। পরে জাকির হুসেনের বোন খুরশিদ আউলিয়া ভারতীয় গণমাধ্যম পিটিআইকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার ভাই গুরুতর অসুস্থ। আমরা ভারত ও বিশ্বব্যাপী তার সব অনুরাগীর কাছে তার সুস্থতার জন্য দোয়া চাই।’

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের কিংবদন্তিতুল্য এক শিল্পী জাকির হুসেন। কিংবদন্তি তবলাশিল্পী আল্লারাখার প্রথম সন্তান জাকির হুসেনের জন্ম ১৯৫১ সালে ভারতের মুম্বাই শহরে। ৩ বছর বয়সে বাবার হাতে জাকিরের তবলায় হাতেখড়ি। ১২ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে প্রথম কনসার্ট। সেই থেকে ভারতজুড়ে তার প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিশ্ববাসী দেখেছেন, কীভাবে বাদ্যশৈলীর মধ্যদিয়ে পূর্ব ও পশ্চিমের সংগীতকে একসুতায় গেঁথেছেন।

জাকির হুসেন ১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ১৯৭৩ সালে খ্যাতিমান মার্কিন গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসনের ‘লিভিং ইন দ্য ম্যাটেরিয়াল ওয়ার্ল্ড’ অ্যালবামের জন্য কাজ করেন। এতে বিশেষভাবে পরিচিতি পেয়ে যান তিনি। তার পর থেকে খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী জন ম্যাকলাফলিন, মিকি হার্ট, বিল ল্যাসওয়েল, ভ্যান মরিসন, জো হেন্ডারসনসহ আরও অনেকের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেছেন।

জাকির হুসেনের ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা জুড়ে রয়েছে ভারতীয় শাস্ত্রীয়সংগীত। একক ক্যারিয়ারে দ্যূতি ছড়ানোর পাশাপাশি তবলায় তিনি সঙ্গত করেছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, শিব কুমার শর্মা, কত্থক নৃত্যগুরু বিরজু মহারাজকে। তারা সবাই কিংবদন্তি। ১৯৯২ সালে জাকির হুসেন প্রতিষ্ঠা করেন সংগীত প্রযোজনা সংস্থা ‘মোমেন্ট রেকর্ড’। সেখান থেকে প্রকাশিত হয়েছে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ও বিশ্বসংগীতের খ্যাতিমান সব শিল্পীদের সংগীতকর্ম। ২০০৬ সালে ‘মোমেন্ট রেকর্ড’ থেকে মুক্তি পায় ‘গোল্ডেন স্ট্রিং অব দ্য সরোদ’ অ্যালবাম, যেটি গ্র্যামি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। ভারত থেকে পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন জাকির হুসেন। চলতি বছর বিশ্বসংগীতের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার গ্র্যামিও পেয়েছেন।

সর্বশেষ ‘শক্তি’ ব্যান্ডের অন্যতম শিল্পী হিসেবে কাজ করছিলেন জাকির হুসেন। দলটির প্রধান কণ্ঠশিল্পী শঙ্কর মহাদেবন। দলে বেহালা বাজান গণেশ রাজাগোপালন এবং অন্য তালবাদ্যে ভি সেলভাগণেশ, গিটারে জন ম্যাকলকলিন। ২০২৩ সালের ৩০ জুন ‘দিস মোমেন্ট’ অ্যালবামটি মুক্তি পায়। মূলত ৬৬তম গ্র্যামিতে ‘বেস্ট গ্লোবাল মিউজিক অ্যালবাম’ শাখায় ভারতীয় এই ব্যান্ড ‘শক্তি’র গানের অ্যালবাম ‘দিস মোমেন্ট’ লাভ করে গ্র্যামি।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অন্যতম সংগঠক ছিলেন ওস্তাদ জাকির হুসেনের বাবা আল্লারাখা খান। বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছেন জাকির হুসেন। ২০১৫ সালে বেঙ্গলের আয়োজনে শাস্ত্রীয়সংগীত উৎসবে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে তবলায় যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন তিনি।

আরএমডি/জিকেএস

Read Entire Article