দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্ববহ উৎসব হয়ে উঠেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। অথচ প্রতি বছর এ আয়োজনে উঠে আসে পুরোনো আকুতি, স্থায়ী প্রদর্শনশালা! আজ ২৩তম আয়োজনেও তথ্য উপদেষ্টার কাছে সেই প্রয়োজনের কথা জানালেন আয়োজক প্রধান।
আজ (১১ জানুয়ারি) শনিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ছিল উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনপর্ব। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক মানের একটি উৎসব করতে পারছি, এটা আমাদের জন্য গৌরবের। এ জন্য আয়োজকদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। এই আয়োজনের মধ্যদিয়ে আমাদের সিনেমাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে পারছি। আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে আরও সমৃদ্ধ করে কীভাবে বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাওয়া যায়, সরকারের পক্ষ থেকে সে কাজে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করব।’
রাজধানী ঢাকাকে নিয়ে অনেক বড় আকাঙ্ক্ষার কথাও বলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম এই সংগঠক।
নাহিদ বলেন, ‘সংস্কৃতির বিকাশে সিনেমা অনেক বড় একটি ভূমিকা পালন করে। এ রকম উৎসবের মাধ্যমে ঢাকাকে আমরা বহু সংস্কৃতি এবং বহু ভাষাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত করতে পারব বলে প্রত্যাশা করি। আমাদের আকাঙ্ক্ষা, একদিন ঢাকা হবে সংস্কৃতিচর্চার লীলাভূমি।’
গানের দল জলের গানের পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় উৎসব উদ্বোধনের প্রথম ধাপ। মিলনায়তনকে আনন্দে ভাসিয়ে তারা গেয়ে শোনান ‘এমন যদি হতো আমি পাখির মতো’, ‘বকুল ফুল’ গানগুলো। পরে মঞ্চে আসেন অতিথিরা। গানের কলরব থামলে ১ মিনিট নিরবতার মাধ্যমে স্মরণ করা হয় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ ও গত এক বছরে প্রয়াত চলচ্চিত্রের মানুষদের।
স্বাগত বক্তব্যে উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল তুলে ধরেন আয়োজনের অর্থায়নসহ নানান সংকটের কথা। তিনি বলেন, ‘এই উৎসব নিয়ে আমরা এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছি। পৃষ্ঠপোষক ছাড়া এ আয়োজন করা কঠিন। এ বছরও প্রয়োজনীয় স্পনসর আমরা পাইনি। আশা করছি, পরেরবার পাবো। এ আয়োজনের জন্য আমাদের স্থায়ী একটা জায়গা খুবই দরকার। যেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমরা উৎসবটি করতে পারবো।’
চীনা চলচ্চিত্র প্রশাসনের আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক শু ইয়াং দুই দেশের সিনেমার আদান-প্রদান নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বাংলাদেশের সিনেমাকে তুলে ধরতে সহায়তার কথা বলেন।
উৎসবে উপস্থিত ছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। চীনের সিনেমার বাজার ও গত বছরের আয়ের তথ্য তুলে ধরেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় বৃহৎ এই বাজারে বাংলাদেশের সিনেমার প্রসারের ব্যাপারে নিজেদের আগ্রহের কথা জানান ওয়েন। তিনি বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর হলো। বাংলাদেশের সিনেমাকে এগিয়ে নিতে আমরা একে অন্যের সঙ্গে কাজ করতে পারি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উৎসবের নির্বাহী সদস্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘উৎসবের সিনেমাগুলোর সেন্সর সার্টিফিকেশন নিয়ে প্রতি বছর অনেক দৌড়ঝাপ করতে হয়। সরকার সেটা কমানোর উদ্যোগ নিতে পারে। এই উৎসবকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সাহায্য মঞ্জুরি খাতের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করলে প্রতিবছর নির্দিষ্ট কিছু বরাদ্দ পাওয়া যাবে, যা এই উৎসব আয়োজনে বড় সহায়তা করবে।’
জালাল আহমেদ আরও বলেন, ‘অর্থ বিভাগের কাছে আমাদের প্রতিবছর যেতে হয় সেন্সর ফি মওকুফের জন্য। ফি মওকুফ করা হয়। এটাকে নিয়মে পরিণত করলে আমাদের সময় ও শ্রম বেঁচে যায়। অর্থ বিভাগ প্রতিবছর কিছু আর্থিক সহায়তাও করে। এর জন্য আমাদের অনেকবার সেখানে যেতে হয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাহায্য মঞ্জুরি খাতের তালিকায় উৎসবটিকে অন্তর্ভুক্ত করলে প্রতিবছর নিয়ম করে অর্থ সহায়তা পাওয়া যাবে, তাতে উৎসবের জন্য অনেক বড় উপকার হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির চেয়ারপারসন কিশওয়ার কামাল, এশিয়ান কম্পিটিশন সেকশনের জুরিবোর্ডের সদস্য অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ। উদ্বোধন ঘোষণা শেষে দেখানো হয় চীনের সিনেমা ‘মুন ম্যান’। এটি পরিচালনা করেছেন চিউ ঝ্যাং।
৭৫ দেশের ২২০টি চলচ্চিত্র নিয়ে শুরু হলো এ উৎসব, চলবে ১৯ জানুয়ারি পযন্ত। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও গ্রিন ইউনিভার্সিটি মিলনায়তনে বিনা মূল্যে দেশি-বিদেশি এসব সিনেমা উপভোগ করতে পারবেন যে কেউ।
আরএমডি/এমকেআর