সন্তান ইংরেজি মাধ্যমে পড়লে জানাতে হবে আয়কর রিটার্নে

4 weeks ago 9

সন্তান যদি ইংরেজি মাধ্যম, বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিদেশে পড়াশোনা করে তা এখন থেকে জানাতে হবে আয়কর রিটার্নে।

এছাড়া বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও টেলিফোন বিল যৌক্তিক পরিমাণে প্রদর্শন করা হয়েছে কি না তা এরকম ৯ ধরনের তথ্য জানাতে হবে রিটার্নের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কিত তথ্যের ব্যয় বিবরণীতে। আয়কর রিটার্ন অডিট নির্দেশনা-২০২৫ এ, এসব নির্দেশনার কথা বলা হয়েছে।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর ফাঁকি রোধ ও কর প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনতে ‘আয়কর রিটার্ন অডিট নির্দেশনা, ২০২৫’ জারি করেছে। নতুন এ নির্দেশনায় করদাতাদের রিটার্ন যাচাই, অডিট প্রক্রিয়া, ঝুঁকিপূর্ণ খাত চিহ্নিতকরণ এবং আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত নীতিমালা দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কর ফাঁকি প্রতিরোধ, কর পরিহারের প্রবণতা কমানো এবং একটি সুস্থ কর সংস্কৃতি গড়ে তোলাই মূল উদ্দেশ্য। ঝুঁকিপূর্ণ খাত চিহ্নিত করা এবং কর আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করাও অডিটের অন্যতম লক্ষ্য।

কাদের রিটার্ন অডিট হবে?

করদাতাদের রিটার্ন অডিটের জন্য রিস্ক বেইজড সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া প্রবর্তন করা হয়েছে।

ব্যক্তি করদাতাদের রিটার্ন র্যান্ডম সিলেকশন পদ্ধতিতে বাছাই করা হবে।

কোম্পানি ও অন্যান্য বড় করদাতাদের ক্ষেত্রে বিশেষ অডিট টিম গঠন করে ঝুঁকি মূল্যায়নের ভিত্তিতে নির্বাচন করা হবে।

করদাতাদের রিটার্ন যাচাইয়ে নতুন নিয়ম

অডিটে করদাতাদের বিভিন্ন উৎস থেকে আয় চাকরি, ভাড়া, কৃষি, ব্যবসা, মূলধন লাভ, বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থ (রেমিট্যান্স) ইত্যাদি সঠিকভাবে ঘোষিত হয়েছে কি না তা খুঁটিয়ে দেখা হবে।

চাকরি থেকে প্রাপ্ত আয় ও ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের মিল খতিয়ে দেখা হবে।

আরও পড়ুন:

ভাড়া আয় ঘোষিত মূল্যের সঙ্গে বাজারদরের সামঞ্জস্য যাচাই হবে।

ব্যবসায়িক লেনদেনে ব্যাংক হিসাব, ক্রয়-বিক্রির নথি ও ভ্যাট রিটার্ন মিলিয়ে দেখা হবে।

বিদেশ থেকে প্রেরিত রেমিট্যান্স প্রকৃত উপার্জনকারীর নামে এসেছে কি না, তাও যাচাই হবে।

অডিট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা

অডিট টিমের তদন্ত শেষে করদাতাকে ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। যদি অসঙ্গতি ধরা পড়ে, তবে করদাতাকে সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করতে হবে। করদাতা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশেষ নজর কোম্পানির ওপর

কোম্পানি করদাতাদের ক্ষেত্রে অডিট রিপোর্টে ক্রয়-বিক্রির হিসাব, স্থায়ী সম্পদ, ব্যালান্স শিট ও প্রফিট অ্যান্ড লস অ্যাকাউন্ট খুঁটিয়ে দেখা হবে। ভুয়া ব্যয় দেখানো বা আয়ের উৎস গোপন করলে কর নির্ধারণের পাশাপাশি জরিমানার বিধানও থাকবে।

কত রিটার্ন অডিট হবে?

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করদাতাদের সব রিটার্ন অডিট করা হবে না। মোট দাখিলকৃত রিটার্নের সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ অডিটের আওতায় আনা হবে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে,

স্বাভাবিক ব্যতীত অন্যান্য করদাতাদের (যেমন কোম্পানি ইত্যাদি) জন্য প্রতিটি কর সার্কেলে একটি অডিট বাছাইকরণ টিম থাকবে, যা এনবিআর চূড়ান্ত করবে। পূর্ববর্তী এবং বর্তমান বছরের রিটার্ন যাচাই করে যদি আইনগত ও বাস্তব ত্রুটি থেকে রাজস্ব ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, তবে অডিটের জন্য বাছাই করা হবে।

কর অব্যাহতি বা হ্রাসকৃত হারে কর প্রযোজ্য আয়ের ক্ষেত্রে প্রদর্শিত তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করা হবে।

আরও বলা হয়েছে, একজন করদাতার একটি বছরের রিটার্ন অডিট হলে প্রয়োজনবোধে পূর্ববর্তী বা পরবর্তী বছরের রিটার্নও অডিট করা যেতে পারে। একই করদাতার একাধিক বছরের রিটার্ন এক সঙ্গে অডিট করা যাবে না। যথাযথ কারণ ও প্রমাণ ছাড়া ক্ষতি, শূন্য বা খুব কম আয়ের রিটার্নে কর রাজস্ব ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে অডিটের জন্য বাছাই করা যাবে।

ব্যক্তিগত করদাতার অডিট প্রতিবেদন প্রণয়নের ক্ষেত্রে

করদাতা যদি ঋণ (ব্যাংক, গাড়ি, হাউস লোন ইত্যাদি) নিয়ে থাকে, তবে প্রদত্ত সুদ ব্যয়ের তথ্য রিটার্নে দেখানো হয়েছে কি না যাচাই করার কথা বলা হয়েছে। করদাতা যদি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হয় এবং কোম্পানি থেকে ঋণ গ্রহণ করে, তবে তা ধারা ২(৮১) (ঙ) অনুসারে লভ্যাংশ ধরা হবে কি না তা যাচাই করার কথা বলা হয়েছে।

কোম্পানি করদাতার অডিটের ক্ষেত্রে

ক্রয়, উৎপাদন ব্যয়, ব্যাংক লেনদেনের সঙ্গে প্রদর্শিত টার্নওভার মিলছে কি না, ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যয় প্রদর্শন করা হয়েছে কি না, প্রদর্শিত ব্যয় কর আইন অনুযায়ী অনুমোদিত কি না, কোম্পানি কর্তৃক উৎসে কর কেটে সরকারে জমা দেওয়া হয়েছে কি না, প্রদর্শিত ঋণ যথাযথ কি না, স্থায়ী সম্পদের সংযোজন প্রদর্শিত হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার কথা হয়েছে।

এছাড়া কোম্পানির কাঁচামাল, মজুত, বেতন, ওভারহেড ব্যয় যাচাই, ব্যাংক লেনদেন ও সরবরাহকারীর তথ্য মিলিয়ে দেখা, ভ্যাট রিটার্ন ও ব্যাংক জমার সঙ্গে বিক্রয় মিলানো, ব্যাংক স্টেটমেন্টের সঙ্গে প্রদর্শিত বিক্রয় যাচাই, পূর্ববর্তী বছরের সঙ্গে তুলনা করে জিপি রেশিও অস্বাভাবিক হলে তদন্ত করতে হবে।

এছাড়া ভাউচার ও উৎসে কর কর্তনের প্রমাণ যাচাই, সম্পদ, দায়, মূলধন, শেয়ারহোল্ডারদের লেনদেন যাচাইয়ের কথা বলা হয়েছে নির্দেশিকায়।

এসএম/এসএনআর/এমএস

Read Entire Article