সন্তানের ডিভাইস ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে

2 hours ago 3

আধুনিক যুগে প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শিশু ও টিনএজারদের মধ্যে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই প্রযুক্তি যেমন তাদের শিক্ষা, যোগাযোগ এবং বিনোদনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে, তেমনি এর অপব্যবহারের ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্য। তাই প্যারেন্টাল কন্ট্রোল বা অভিভাবকীয় নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

শিশু ও টিনএজারদের মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো অনলাইনে উপযুক্ত কনটেন্ট নির্বাচন করা। ইন্টারনেটে অসংখ্য তথ্য এবং কনটেন্ট রয়েছে। কিন্তু সব কনটেন্ট শিশুদের বা টিনএজারদের সামনে আসার উপযোগী না। এমনকি সেগুলো তাদের জন্য ক্ষতিকর। যেমন, সহিংসতা, অশ্লীলতা, মিথ্যা তথ্য ইত্যাদি।

এছাড়াও, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম অর্থাৎ বেশিক্ষণ সময় মোবাইল, কম্পিউটার বা টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে থাকা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গবেষকরা বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ও অতিরিক্ত ডিভাইসের ব্যবহার শিশুদের চোখের সমস্যা, ঘুমের ব্যাঘাত, সাধারণ যোগাযোগ দক্ষতা, মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা এবং সামাজিক দক্ষতা কমিয়ে দেয় ।

এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায় প্যারেন্টাল কন্ট্রোল একটি কার্যকর সমাধান। প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অনলাইন কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এই টুলসগুলোর মাধ্যমে শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট ব্লক করা, স্ক্রিন টাইম সীমিত করা এবং তাদের অবস্থান ট্র্যাক করা সম্ভব।

প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের জন্য ব্যবহার করতে পারেন যেসব সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন-

১. গুগল ফ্যামিলি লিংক (Google Family Link)

গুগল ফ্যামিলি লিংক সন্তানদের অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে অভিভাবকদের সাহায্য করে। এর মাধ্যমে যা যা করা যায়-

  • স্ক্রিন টাইম সীমিত করা: অর্থাৎ শিশুদের ডিভাইস ব্যবহারের সময় নির্ধারণ করে দিতে পারেন।
  • অ্যাপ ডাউনলোড এবং ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ: এর ফলে শিশুরা তাদের বয়স অনুযায়ী অনুপযুক্ত অ্যাপ ডাউনলোড ও ব্যবহার করতে পারবেনা।
  • ডিভাইসের অবস্থান ট্র্যাক করা: এর ফলে ডিভাইসটি সঙ্গে থাকলে আপনার শিশুর অবস্থান আপনার সর্বক্ষণ জানা থাকবে, যা শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
  • ঘুমানোর সময় নির্ধারণ করে দিয়া: আপনার সন্তানের ঘুমানোর সময় নির্দিষ্ট করে তা ডিভাইসে সেট করে দিলে সে রাত জেগে মোবাইল চালানোর মতো অভ্যাসে আক্রান্ত হবে না।

২. অ্যাপল স্ক্রিন টাইম (Apple Screen Time)

অ্যাপল স্ক্রিন টাইম আইফোন, আইপ্যাড এবং ম্যাক ডিভাইসে ব্যবহার করতে পারবেন।

  • এটি প্রতিদিনের এবং সাপ্তাহিক রিপোর্ট দেয়। এর ফলে অভিভাবকরা বুঝতে পারবেন যে শিশুরা কতক্ষণ তাদের ডিভাইস ব্যবহার করছে।
  • অ্যাপ ব্যবহারের সময় সীমিত করতে পারবেন।
  • কনটেন্ট ফিল্টারিং এর মাধ্যমে অনুপযুক্ত ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ ব্লক করতে পারেন।
  • কমিউনিকেশন লিমিট সেট করতে পারেন, যেন শিশুরা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। ফলে অনাকাঙ্খিত ব্যক্তিরা আপনার শিশু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেনা।

৩. মাইক্রোসফট ফ্যামিলি সেফটি (Microsoft Family Safety)

মাইক্রোসফট ফ্যামিলি সেফটি উইন্ডোজ এবং এক্সবক্স ডিভাইসে ব্যবহারযোগ্য একটি টুল।

  • এর মাধ্যমে অভিভাবকরা সন্তানের অনলাইন কার্যকলাপ মনিটর করতে পারবেন, যেমন কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করা হয়েছে বা কোন গেম খেলা হয়েছে।
  • স্ক্রিন টাইম ম্যানেজ করতে পারবেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে ডিভাইস লক করতে পারেন।
  • অবস্থান ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন।

৪. থার্ড-পার্টি প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপস্

বিভিন্ন থার্ড-পার্টি অ্যাপ্লিকেশনও রয়েছে যার মাধ্যমে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অনলাইন কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। যেমন-

  • কাস্টোডিও (Qustodio): এই অ্যাপটির মাধ্যমে স্ক্রিন টাইম ম্যানেজমেন্ট, ওয়েবসাইট ব্লকিং, সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং এবং লোকেশন ট্র্যাকিং করতে পারবেন।
  • নেট ন্যানি (Net Nanny): এই অ্যাপটি রিয়েল-টাইম কনটেন্ট ফিল্টারিং এবং স্ক্রিন টাইম ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
  • ক্যাসপারস্কি সেফ কিডস্ (Kaspersky Safe Kids): এই অ্যাপটি শিশুদের অনলাইন কার্যকলাপ মনিটরিং, স্ক্রিন টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং অবস্থান ট্র্যাকিং করতে অভিভাবকদেরকে সাহায্য করে।

৫. রাউটার-লেভেল কন্ট্রোল

কিছু ইন্টারনেট রাউটারে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ফিচার রয়েছে যা সম্পূর্ণ নেটওয়ার্কে প্রয়োগ করা যায়। এর মাধ্যমে অভিভাবকরা যেসব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন-

  • নির্দিষ্ট ডিভাইসের জন্য ইন্টারনেট অ্যাক্সেস সীমিত করা।
  • নির্দিষ্ট সময়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া।
  • অনুপযুক্ত ওয়েবসাইট ব্লক করে দেওয়া।

৬. অপারেটিং সিস্টেমের বিল্ট-ইন ফিচার

অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস উভয় অপারেটিং সিস্টেমেই বিল্ট-ইন প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ফিচার রয়েছে। যেমন-

  • অ্যান্ড্রয়েড: গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোডের জন্য পাসওয়ার্ড সেট করা যায় এবং নির্দিষ্ট অ্যাপ লক করা যায়।
  • আইওএস: কনটেন্ট রেস্ট্রিকশন এবং প্রাইভেসি সেটিংসের মাধ্যমে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

প্রযুক্তিগত সমাধানগুলো ব্যবহার করে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন। তবে শুধু প্রযুক্তিগত সমাধানই যথেষ্ট নয়। এই টুলসগুলোর পাশাপাশি অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা এবং ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। শিশুদের বুঝতে হবে যে ইন্টারনেটে কী ধরনের কনটেন্ট নিরাপদ এবং কীভাবে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখা যায়। এছাড়াও, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং শিশুদের বাস্তব জীবনে ব্যস্ত রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন

এএমপি/জেআইএম

Read Entire Article