বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেশ অতিক্রমকারী দানিউব নদী ব্ল্যাক ফরেস্ট থেকে ব্ল্যাক সি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই নদী শুধু একটি জলপথ নয়—এটি একটি মহাদেশকে সংযুক্ত করেছে। অনেক নদী আছে যারা উপত্যকা তৈরি করে, সভ্যতার ভিত্তি গড়ে তোলে এবং কবিদের অনুপ্রেরণা দেয়। কিন্তু দানিউব তার চেয়েও ব্যতিক্রম।
দানিউব নদী জার্মানি, অস্ট্রিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, মলদোভা এবং ইউক্রেন—এই ১০টি দেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী এটি। যার দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৮৬০ কিলোমিটার। এটি শুধু আকারেই নয়, ভূরাজনৈতিক প্রভাব ও আন্তঃসীমান্ত সংযোগের দিক থেকেও অগ্রগণ্য।
নদীটির উৎস জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্টে—ডোনাউএসশিনজেন শহরে, যেখানে ছোট দুটি স্রোতধারা ব্রেগ এবং ব্রিগাখ মিলিত হয়ে দানিউব তৈরি করে। সেখান থেকে এটি উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বয়ে চলেছে নিঃশব্দ গ্রাম ও জাঁকজমকপূর্ণ শহরের পাশ দিয়ে।
এটি বিশ্বের একমাত্র প্রধান নদী যা চারটি দেশের রাজধানীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত—ভিয়েনা, ব্রাতিস্লাভা, বুদাপেস্ট এবং বেলগ্রেড। এভাবেই দানিউব হয়ে উঠেছে ইউরোপের এক সাংস্কৃতিক জীবনরেখা।
এই নদী শুধু শহরগুলোকে পাশ কাটিয়ে যায় না, বরং সেগুলোর গঠনে ও বিকাশে গভীর অবদান রেখেছে। প্রাচীনকাল থেকেই দানিউব ছিল বাণিজ্য পথ, প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ও পানির উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।
দানিউব ইউরোপের অন্যতম বাণিজ্যিক রুট, যার গুরুত্ব আরও বেড়েছে মাইন-ডানিউব খাল নির্মাণের পর। এই খাল দানিউবকে রাইন নদীর সঙ্গে যুক্ত করেছে, ফলে এখন উত্তর সাগর থেকে ব্ল্যাক সি পর্যন্ত নৌপথে পণ্য পরিবহন সম্ভব—যা খরচ ও কার্বন নিঃসরণ কমাতে বড় ভূমিকা রাখছে।
রোমানিয়া ও সার্বিয়ার সীমান্তে অবস্থিত আয়রন গেট ড্যামের মতো জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে নদীটি শক্তির উৎস হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এই উন্নয়নের বিপরীতে রয়েছে দূষণের চ্যালেঞ্জ—শিল্প বর্জ্য, কৃষিজ রাসায়নিক ও শহরের আবর্জনায় নদীর স্বাস্থ্য হুমকির মুখে।
তবুও পরিবেশ রক্ষার জন্য নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নদীর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পানির মান উন্নয়নে কাজ করছে অনেক সংস্থা।
দানিউব শুধু ভৌগোলিক বিস্ময় নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক প্রতীক। জোহান স্ট্রাউসের বিখ্যাত দ্য ব্লু দানিউব ওয়াল্টজ-এ এই নদী যেভাবে জীবন্ত হয়ে উঠেছে, তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কবি, সুরকার, ও শিল্পীদের মুগ্ধ করেছে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
এমএসএম