সমস্যায় জর্জরিত শেরপুর বিসিকে উৎসাহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা
অবকাঠামোসহ নানা সংকটের মধ্য দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে শেরপুরের বিসিক শিল্পনগরী। দুই দশকেও এই শিল্প নগরীতে লাগেনি কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের ছোঁয়া। ফলে আগ্রহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এই অবস্থায় শিল্পকারখানা টিকিয়ে রাখতে দ্রুত অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। শেরপুর বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে শহরের নৌহাটা এলাকায় মৃগী নদীর পাশে প্রায় ১৫ একর জমি নিয়ে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। ২০০০ সালে এখানে বিসিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া শুরু করে। এই শিল্পনগরীতে ৩৫টি প্লট রয়েছে। যার প্রতিটিই বরাদ্দ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন সেবার জন্য রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের দুটি লাইন ও পানির ব্যবস্থা। তবে বিসিক শিল্পনগরীতে নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য চারপাশে বাউন্ডারি, লাইটিং ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরা ব্যবস্থা, নিরাপত্তার জন্য পুলিশিং ক্যাম্প, উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, গ্যাসের সংকট দূরীকরণের দাবি জানান মালিক, শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। বিসিকের তাজ কোল্ড স্টোরেজে কর্মরত সোহরাব হোসেন বল
অবকাঠামোসহ নানা সংকটের মধ্য দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে শেরপুরের বিসিক শিল্পনগরী। দুই দশকেও এই শিল্প নগরীতে লাগেনি কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের ছোঁয়া। ফলে আগ্রহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এই অবস্থায় শিল্পকারখানা টিকিয়ে রাখতে দ্রুত অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
শেরপুর বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে শহরের নৌহাটা এলাকায় মৃগী নদীর পাশে প্রায় ১৫ একর জমি নিয়ে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। ২০০০ সালে এখানে বিসিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া শুরু করে। এই শিল্পনগরীতে ৩৫টি প্লট রয়েছে। যার প্রতিটিই বরাদ্দ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন সেবার জন্য রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের দুটি লাইন ও পানির ব্যবস্থা।
তবে বিসিক শিল্পনগরীতে নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য চারপাশে বাউন্ডারি, লাইটিং ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরা ব্যবস্থা, নিরাপত্তার জন্য পুলিশিং ক্যাম্প, উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, গ্যাসের সংকট দূরীকরণের দাবি জানান মালিক, শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।
বিসিকের তাজ কোল্ড স্টোরেজে কর্মরত সোহরাব হোসেন বলেন, আমাদের হিমাগারে আসা ট্রাক, অটোরিকশা, নসিমন, ভ্যানসহ প্রতিনিয়ত ভারী যান চলাচল করে। কিন্তু এখানে রাস্তাগুলো অত্যন্ত সরু। জ্যাম লেগে যাওয়ার অভিযোগ প্রতিনিয়ত আসে। কিন্তু সরু রাস্তার জন্য বিকল্প কোনো উপায় নেই। এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাও আরও উন্নত করা প্রয়োজন।
খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মদিনা বেকারিতে কর্মরত ইলিয়াস উদ্দিন বলেন, আমাদের মালিক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে কারখানায়। কিন্তু গ্যাসের চাপ একেবারের নেই, তাই চাহিদামাফিক উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে দিনের পর দিন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও চরম সংশয় রয়েছে। সন্ধ্যার পর এখানকার রাস্তাগুলো দিয়ে চলাচল করা খুবই অনিরাপদ। কারণ সড়কে লাইট থাকলেও তা জ্বলে না, সীমানাপ্রাচীর না থাকায় মাদকসেবী, ছিনতাইকারীদের নিরাপদ স্পটে পরিণত হয়েছে এ এলাকা।
মুড়ি মিলে কর্মরত শাহাদাত হোসেন বলেন, সীমানা প্রাচীর না থাকায় মাদকসেবী, ছিনতাইকারীরা নিরাপদে ভেতরে আসা যাওয়া করে। বিসিকের ভেতরেই চলে নিয়মিত মাদক সেবন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিত টহল নয়, স্থায়ী চেকপোস্ট বা ক্যাম্প বসানোর দাবি জানাচ্ছি।
উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেন, শিল্পবান্ধব পরিবেশ না পেয়ে অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছেন। এছাড়া এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় প্রতিনিয়ত চিন্তায় থাকেন তারা। আর উৎপাদনের প্রধান উপাদান গ্যাস, এখানে গ্যাসের চাপ একেবারেই নেই বললেই চলে। এসব অসুবিধার জন্য উদ্যোক্তারা উৎপাদন বিমুখ হচ্ছে।
বিসিকে গ্যাস বিদ্যুৎ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দোহাই দিয়ে সবচেয়ে বড় কর্মস্থল একমাত্র সোয়েটার কারখানাটিও বন্ধ হয়ে যায় সাত-আট বছর আগে। কারখানাটিতে দুই শতাধিক শ্রমিক নিয়মিত কাজ করতেন। কিন্তু নানান সংকট আর সমস্যায় সোয়েটার কারখানাটি বন্ধ হলে বিসিক একেবারে ঝিমিয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন-
বিসিকের জায়গা সংকটে স্বপ্ন ভাঙছে নতুন উদ্যোক্তাদের
আবর্জনায় ভরা ফেনী বিসিক শিল্পনগরী, কর্তৃপক্ষ বলছে বাজেট কম
৪২ কোটি টাকার বিসিকে কারখানা চলে ৩টি, বাকি সব আগাছা
শিল্প উদ্যোক্তা তারিক আজিজ বলেন, দেশের কয়েকটি জেলায় আমার ব্যবসা চলমান। আমি এখানে একটি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চালু করতে আগ্রহী। কিন্তু ঠিকমতো গ্যাসের ব্যবস্থা না থাকা ও নিরাপত্তার অভাবের কারণে আমি কারখানাটি চালুর উদ্যোগ নিতে পারছি না। অথচ এখানে কাজ করার প্রচুর শ্রমিক আছে।
শেরপুর সম্মিলিত নাগরিক উদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, বিসিকের চারপাশে কোনো সীমানা দেওয়াল না থাকায় বহিরাগত লোকজন সহজে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। চলে মাদকের কেনাবেচাও। চুরি-ছিনতাইতো আছেই। আর শুরুতে চালু হওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে এখন তালা ঝুলছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকি না থাকা এবং উদাসীনতায় এখানে গড়ে উঠছে না ক্ষুদ্র শিল্প।
শেরপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আরিফ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, গত দুই দশকেও আমাদের বিসিক উৎপাদনমুখী ও কর্মসংস্থানের আশ্রয়স্থল হতে পারেনি। এখানকার ৩৫টি প্লটের মধ্যে প্রায় ১৫টিই বন্ধ। আর যেগুলো চলছে সেটাও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। একমাত্র আলুর হিমাগার ছাড়া বড় কোনো প্রতিষ্ঠান নেই বিসিকে। এখানে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পারলে, আগ্রহ দেখাবে নতুন নতুন উদ্যোক্তারা।
শেরপুর বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আতাউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিসিকে বাজেট স্বল্পতার কারণে সীমানা প্রাচীরের কাজটি হয়নি। আমরা এখানকার উদ্যোক্তাদের নিয়ে নিয়মিত পরামর্শ ও আলোচনা সভার ব্যবস্থা করি। সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে উদ্যোক্তাদের ভাবনাগুলো শুনানি হয়। আর গ্যাসের চাপের বিষয়টি ও পুলিশিং ক্যাম্পের ব্যবস্থা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে আগ্রহী।
এফএ/এমএস
What's Your Reaction?