সম্পত্তির জন্য স্ত্রী-সন্তানদের নির্যাতনের শিকার খুইল্লা মিয়া

7 hours ago 6

চট্টগ্রাম নগরীর পশ্চিম বাকলিয়া শান্তিনগর নিরাপদ হাউজিং সোসাইটির সত্তরোর্ধ্ব ব্যবসায়ী খুইল্লা মিয়া সওদাগর। পশ্চিম বাকলিয়ার শান্তিনগর নিরাপদ হাউজিংয়ের দুটি ভবনের মালিক তিনি নিজেই। নগরীর বৃহত্তম পাইকারি বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজারে রয়েছে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও। প্রায় ১৩ দিন ধরে কোনো খোঁজ নেই তার। বিষয়টি রহস্যজন মনে হয়েছে স্থানীয়দের। হঠাৎ করেই কেন গায়েব তিনি। এরপর এক কান থেকে দুই কান- স্থানীয়রা জানতে পেরেছেন এ সময়টাতে তাকে বেঁধে নির্যাতন করছেন পরিবারের সদস্যরা। 

পরে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই বিষয়টির সত্যতা পেল তারা। দেখা গেল, বিছানায় দুই হাত-দুই পা ৪টি মোটা নাইলনের দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা। হাতে-পায়ে যে অংশে বাঁধা সেখানে কালচে দাগ পড়ে গেছে। যখন নির্যাতন চলে, তখন মাঝেমধ্যে বাইরে থেকেও আর্তনাদ শোনা যায়। এমন মুমূর্ষু অবস্থায়ও ছাড় পাননি সত্তরোর্ধ্ব ব্যবসায়ী খুইল্লা মিয়া সওদাগর। 

অভিযোগ উঠেছে, সম্পত্তি লিখে নিতে তার স্ত্রী-সন্তানরাই এ নির্যাতন চালিয়েছেন।

নিজ মালিকানাধীন ভবনের একটি কক্ষে খুইল্লা মিয়াকে দিনের পর দিন এমন নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও এত দিন কেউ টের পায়নি। শুক্রবার (০৭ মার্চ) সন্ধ্যায় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাসায় গিয়ে খুইল্লা মিয়াকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। একই সময় নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির দুই সন্তান আব্দুল আউয়াল ও আব্দুল রহিমকে ধরে বাকলিয়া থানা-পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তাদের মধ্যে আব্দুল আউয়াল পরিবারের বড় সন্তান।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বাকলিয়া থানার ওসি মো. ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ব্যবসায়ী খুইল্লা মিয়ার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছেন। নির্যাতনের ঘটনায় দুজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বাকলিয়া থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সম্পত্তিসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সন্তানদের হাতে লোকটি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শনিবার দুপুরে অভিযুক্ত দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ৫৪ ধারায় অভিযোগ এনে আটকে রাখার আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

খুইল্লা মিয়াকে উদ্ধারে যাওয়া স্থানীয় বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাদের কালবেলাকে বলেন, ‘এক কান-দুই কান হওয়ার পর ওনাকে বাসায় আটকে নির্যাতন করার বিষয়টি আমরা জানতে পারি। প্রথমে দু-একজন বিষয়টা জেনে স্থানীয় কাউন্সিলরকে ফোন দেন। পরে কাউন্সিলর আমাদের বিষয়টি জানালে আমরা পুলিশ নিয়ে ওনাকে বাসা থেকে উদ্ধার করি।’ 

তিনি বলেন, ‘খুইল্লা মিয়াকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধারের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছেন। রাত গভীর হওয়ায় তাৎক্ষণিক ঢাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় পরে ওনাকে স্থানীয় বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে তিনি আইসিইউতে আছেন। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, সম্পত্তি লিখে নিতে তার স্ত্রী-সন্তানেরা মিলে তাকে ১৩ দিন ধরে বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়েছেন।’

Read Entire Article