সরকারি চাকরির প্রলোভনে প্রতারণা, মূল হোতাসহ গ্রেফতার ৬

1 hour ago 2

সফিপুর আনসার ব্যাটালিয়ন একাডেমিতে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়েন রাজু (১৯) নামের একজন অংশগ্রহণকারী। এর কিছুক্ষণ পর অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানান পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর কিছু শারীরিক সমস্যা আছে। সেই সমস্যার সমাধান করে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে দাবি করা হয় টাকা।

এরপর ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেওয়া হয় একটি ভুয়া নিয়োগপত্র। এমনই এক প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) মিরপুর -১ নম্বরে অবস্থিত র‍্যাব-৪ এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কোম্পানি কমান্ডার শাহাবুদ্দিন কবীর।

গ্রেফতাররা হলেন-সোহেল রানা ওরফে মিলন (৩৩), তৈয়ব ওরফে মোস্তাক (৪৬), মো. সজীব মুন্সি (৪৪), শামীম আহমেদ (৪৫), মো. মওলাদ আলী খান (৫২) এবং সোহেল রানা ওরফে জিন্নাহ (৩৭)।

গ্রেফতারকালে তাদের হেফাজত থেকে ১টি প্রাইভেটকার, ৭টি মোবাইল ফোন, ২টি ভুয়া নিয়োগপত্র এবং নগদ ৯৫ হাজার ২০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন বলেন, গত কয়েক দিন আগে জনৈক সোহেল রানা আমাদের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে তারা একটি প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানান। তিনি জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সফিপুর আনসার ব্যাটালিয়ন একাডেমিতে নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে তার আপন ছোট ভাই প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ে। এসময় অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি মোবাইলে ফোনের মাধ্যমে জানান তার ভাইয়ের কিছু শারীরিক সমস্যা আছে। ভুক্তভোগী তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে মেজর সোহেল পরিচয় দেন এবং তার সঙ্গে পরে দেখা করতে বলেন।

পরবর্তীতে ভুক্তভোগী ঢাকা মহানগরীর শাহ আলী থানায় অবস্থিত একটি হোটেলে আসামি সোহেল রানার সঙ্গে দেখা করেন। আসামি সোহেল রানা নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দেন এবং তার সঙ্গে থাকা অন্য প্রতারক তৈয়বুর রহমানকে সেনাবাহিনীর কর্নেল বলে পরিচয় করিয়ে দেন। সোহেল ভুক্তভোগীর ভাইকে আনসার ব্যাটালিয়ন সিপাহি পদে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে জানান তার সঙ্গে আনসারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ আছে। ১২ লাখ টাকা দিলে তার ছোট ভাইকে চাকরিতে নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারবেন।

এই প্রস্তাবে ভুক্তভোগী রাজি হন এবং সে মোতাবেক ১৫ সেপ্টেম্বর একটি ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চার লাখ টাকা দেন। টাকা পাওয়ার পর মেজর পরিচয় দানকারী সোহেল, কর্নেল পরিচয় দানকারী তৈয়বুর রহমানসহ অন্যান্য আসামিরা ভুক্তভোগীকে তার ভাই রাজুর (১৯) এর আনসার ব্যাটালিয়নে যোগদানের নিয়োগপত্র দেন। নিয়োগপত্রটি দেওয়ার পর বিকাশ ও নগদ এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আরও এক লাখ টাকা নেয়।

পরে নিয়েগপত্রটি পেয়ে ভুক্তভোগী তার ভাইকে নিয়ে বাড়ি আসেন। বাড়িতে এসে তারা তাদের গ্রামের আনসারের সিপাহি পদে নিয়োগপত্র পেয়েছে এমন একটি ছেলের নিয়োগপত্রের সঙ্গে তাদের নিয়োগপত্রটির অনেক গরমিল দেখতে পান। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে আসামিদের দেওয়া নিয়োগপত্রটি ভুয়া।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শাহ আলী থানা এবং র‌্যাব-৪ বরাবর অভিযোগ দায়ের করে। পরে র‌্যাব-৪এর একটি দল আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে গতকাল রাতে (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা ও সাভারে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ ছয় জনকে গ্রেফতার করে।

এছাড়াও আসামিদের গ্রেফতারের সময় অন্য আরেকজন ভিকটিমকে পাওয়া যায়, যাকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নাম করে নিয়ে এসেছিল।

গ্রেফতার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, আসামিরা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মহানগরীতে অবস্থান করে বিভিন্ন জেলার চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে টাকার মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে। এর আগেও একই ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার কারণে র‌্যাব-৪ কর্তৃক দুইবার গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের।

গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

কেআর/এমআইএইচএস/জিকেএস

Read Entire Article