সরাসরি ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণায় মনঃক্ষুণ্ন হাজারো জাপানপ্রবাসী

3 months ago 51

 

‘ভাই, সত্যি সত্যিই কী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সরাসরি ফ্লাইটটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে? দীর্ঘ ১৭ বছর পর ২০২৩ সালে যখন ঢাকা-নারিতা-ঢাকা রুটে সরাসরি ফ্লাইটটি চালু হয় তখন আমরা কি যে খুশি হয়েছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। বলতে পারেন অনেকটা ঈদের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো খুশি হয়েছিলাম। ‌কারণ এর আগে ট্রানজিট নিয়ে দেশে ফিরতে কোনো কোনো দেশের বিমানবন্দরে ২১ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো।

গতবছর সরাসরি ফ্লাইট চালুর পর আমরা মাত্র ৮ ঘণ্টায় দেশে ফিরতে পারতাম। সাময়িকভাবে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ হলে আমাদের সেই আগের ভোগান্তি পোহাতে হবে। রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে কি আমরা সরকারের কাছে সরাসরি এ ফ্লাইটটি চালু রাখার আশা করতে পারি না?

সম্প্রতি জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক জাপানের টোকিও সফরকালে অসংখ্য প্রবাসীর মুখে এ একই কথা শুনতে পান।

আগামী ১ জুলাই থেকে জাপানের নারিতায় ফ্লাইট পরিচালনা সাময়িকভাবে বন্ধের আগাম ঘোষণা দিয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। মে মাসে সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান হজ ফ্লাইট, উড়োজাহাজের স্বল্পতা ও ব্যবসায়িক বাস্তবতায় আগামী ১ জুলাই থেকে ঢাকা-নারিতা-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা স্থগিত রাখা হবে। বিজ্ঞপ্তির পর থেকেই ৩৫ হাজারেরও বেশি জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশির মন খারাপ। একাধারে তারা ক্ষুব্ধ ও মনঃক্ষুণ্ন।

সম্প্রতি ‘নিক্কেই ফোরামের 'ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলন উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের টোকিও সফর করেন। এ সময় আশায় বুক বেঁধেছিলেন জাপানপ্রবাসীরা।

গত ৩০ মে জাপানে বাংলাদেশ দূতাবাসে স্থানীয় প্রবাসীদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওইদিন সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত জাপানপ্রবাসী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

সেখানে গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় পেয়ে অনেকেই দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও চলমান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হালনাগাদ তথ্য জানতে চান। তবে তাদের প্রত্যেকেই প্রথমে জানতে চান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কী সত্যি সত্যি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দাবি থাকলেও সবার প্রত্যাশা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সরাসরি ফ্লাইট যেন বন্ধ না হয়।

মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বিমান চালু রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, সরাসরি ফ্লাইটটি জাপানগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী ও ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রবাস-জীবনে গতি এসেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে শাক-সবজি, মাছসহ নানা পণ্য জাপানে পৌঁছানোর সুযোগ বাড়ায় বাণিজ্যিক লাভবানও হচ্ছিলেন প্রবাসীরা। তারা সরাসরি ফ্লাইটটি বন্ধ না করার অনুরোধ জানান। বক্তব্যে কেউ কেউ প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে ফ্লাইটটি বন্ধ হচ্ছে না এমন ঘোষণা শুনতে চান। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্যে ফ্লাইটটি অব্যাহত রাখার ব্যাপারে সরাসরি কোনো আশ্বাস দেননি।

তিনি প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের খবরাখবর নেওয়ার জন্য এখানে রাষ্ট্রদূত রয়েছেন। আপনাদের আবেদন নিবেদন তার কাছে করবেন। আপনাদের দাবি-দাওয়া তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। তারপর সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হবে।’

টোকিওর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘কি কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সাময়িকভাবে বন্ধ হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। এটা কী রাজনৈতিক নাকি অন্য কোনো কারণ তাও বোঝা যাচ্ছে না। ১৭ বছর বন্ধ থাকার পর আমরা যাকে ফ্যাসিস্ট সরকার বলি তারা গতবছর সেটি চালু করলো অথচ আমাদের কাঙ্ক্ষিত সরকার এটি বন্ধ করছে। এটি আমাদের জন্য একটি ভয়াবহ দুর্বিষহ ও দুঃখজনক ঘটনা। এ দুঃখের ঘটনা আমরা কাকে বলবো।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা-নারিতা-ঢাকা রুটের যাত্রী চাহিদা প্রচুর। যতবার আমি দেশে গিয়েছি ততবারই ফ্লাইট ফুললি বুকড দেখেছি। এ রুটে শুধু বাংলাদেশি নয়, নেপালি যাত্রীরাও চলাচল করেন।’

‘তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়। আমরা যারা রেমিট্যান্স যোদ্ধা তাদের জন্য কি অল্পস্বল্প ভর্তুকি দিয়ে ফ্লাইটটি চালু রাখা যায় না। কারণ ট্রানজিট হয়ে গেলে কখনো কখনো ২১ ঘণ্টা বিমানবন্দরে বসে থাকতে হয়। তিনি ফ্লাইটটি চালু রাখার জন্য সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানান।’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছিল, যারা ১ জুলাইয়ের পরের তারিখের টিকিট কিনেছেন, তারা চাইলে কোনো ধরনের অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই পুরো টিকিটের মূল্য ফেরত পাবেন। এ জন্য যাত্রীদের বিমানের নিজস্ব সেলস অফিস, কাউন্টার কিংবা সংশ্লিষ্ট ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা-নারিতা রুটে ফের ফ্লাইট চালু করেছিল বিমান। তবে দেড় বছরের মাথায় রুটটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সরাসরি বিমানে করে ঢাকা থেকে জাপান যাওয়ার আর কোনো সুযোগ থাকছে না।

এর আগে ১৯৮১ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা-নারিতা রুটে ফ্লাইট চালু করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটি। পরে ২০০৬ সালে রুটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারও আগে, ১৯৭৯ সালে বিমান ঢাকা-টোকিও রুটে ফ্লাইট শুরু করলেও তা বেশি দিন চালু রাখা সম্ভব হয়নি।

এমইউ/এমএএইচ/

Read Entire Article