সাংবাদিক হেনস্তায় জড়িতদের শাস্তি চায় চবিসাস

3 hours ago 6

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ ও হেনস্তার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা। 

চবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আজহার, দপ্তর সম্পাদক জানে আলম, কার্যনির্বাহী সদস্য মাহফুজ শুভ্র, ভুক্তভোগী সাংবাদিক রেদ্ওয়ান আহমেদ, অনিন্দিতা সরকার প্রথা ও আকিজ মাহমুদ।

ঢাকা মেইলের ক্যাম্পাস প্রতিবেদক ভুক্তভোগী সাংবাদিক রেদ্ওয়ান আহমদ বলেন, বুধবার রাতে কিছু ছাত্র শেখ হাসিনা হলের সামনে থাকা হাসিনার ম্যুরাল ও নৌকা ভাঙতে গেলে খবর পেয়ে আমরা কয়েকজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক সেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য যাই। মেয়েরা হলের পশ্চিম দিকের গেইট ভেঙে শেখ হাসিনার ম্যুরাল এবং নৌকা প্রতীক ভাঙতে বাঁধা দিয়ে ছাত্রদের ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকলে একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা সরে যান।

তিনি আরও বলেন, এ সময় আমরা ঘটনার ছবি-ভিডিও ধারণ করলে ছাত্রীরা আমাদেরকে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা দেন। তারা সাংবাদিকদের হেনস্তা করেন, গালিগালাজ করেন, ফোনও কেড়ে নেন। এমনকি ছবি-ভিডিও ধারণ করলে তারা দুজন সাংবাদিকের গায়ে হাত তোলেন। আমরা এ ঘটনার দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার চাই। আমরা ক্যাম্পাসে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ চাই।

আকিজ মাহমুদ বলেন, আমরা সাংবাদিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে শেখ হাসিনা হলের সামনে গিয়েছিলাম। কিন্তু আবাসিক ছাত্রীরা আমাদের ওপরে চড়াও হয়ে হামলা করেছে। তাদের এমন আচরণ ন্যাক্কারজনক। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলে যেখানে ক্যাম্পাস প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিষয়ের ওপর নজর রেখেছে, সকল অনিয়মের বিষয়ে তাদের কলম চালিয়েছে। সেই সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে কলম বন্ধ করা যাবে না।

অনিন্দিতা সরকার প্রথা বলেন, কেউ আমাদের ক্যামেরা অফ করার জন্য অর্ডার করতে পারে না। ছবি তোলার জন্যও অর্ডার করতে পারে না। আমরা সত্যনিষ্ঠ কাজটা করতে যাই। শেখ হাসিনা হলের মেয়েরা সাংবাদিকদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা তাদের সমস্যাটাই জানতে গিয়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, নারী সাংবাদিক হিসেবে তারা আমার সঙ্গেও বেশ ন্যাক্কারজনক আচরণ করে। কিন্তু কোনো ঘটনা ঘটলেই সবার আগে ক্যাম্পাস প্রতিনিধিরা নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে চলে আসে। অথচ তারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে ফ্যাসিবাদের স্বরূপ দেখিয়েছে।

চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মাহফুজ শুভ্র বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে সাংবাদিকদের ওপর এমন ন্যাক্কারজনক হামলা খুবই নিন্দনীয়। সাংবাদিক সমাজ কখনোই কারও আধিপত্যের কারণে দমে যায়নি। আর দমন নিপীড়নের মাধ্যমে সাংবাদিকদের মুখ কখনোই বন্ধ করা যায় না। এ ঘটনায় যারা জড়িত ছিল, তাদের নিশ্চয়ই কোনো দুরভিসন্ধি ছিল। জড়িতদের সনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। যাতে অন্য কেউ কখনোই সাংবাদিক সমাজের ওপর হামলা করার দুঃসাহস দেখাতে না পারে। 

সাংবাদিক সমিতির দপ্তর, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. জানে আলম বলেন, গতকাল রাতে শেখ হাসিনা হলে যে ঘটনা ঘটেছে এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি৷ ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় যখন মেয়েদেরকে আবাসিক হল থেকে জোরপূর্বক বের করে দিচ্ছিল প্রশাসন, তখন সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, মিডিয়াকে তাদের মতো করে কাজ করতে দিন৷ যারাই এর বিরুদ্ধে যাবে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান থাকবে আমাদের চবি প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হোক। 

চবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আজহার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর আস্থার জায়গা চবি সাংবাদিক সমিতি। আমরা সবসময় নিরপেক্ষভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। চবিসাস জুলাই অভ্যুত্থানে যে অবদান রেখেছে সেটি সারা দেশের মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। অভ্যুত্থানের সময় ছাত্রীদের যখন হল থেকে বের করে দেওয়া হয়, তখন সবচেয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিল এ সাংবাদিক সমিতির। আজ সেই সাংবাদিকদের গায়ে কিছু ছাত্রী হাত তুলেছে, মোবাইল কেড়ে নিয়েছে, হেনস্তা করেছে। 

তিনি আরও বলেন, নতুন প্রশাসন আসার পরে ছেলেদের আবাসিক হলগুলোতে এলোটমেন্ট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মেয়েদের হলগুলোতে আগে থেকেই এলোটমেন্ট থাকায় সেখানে এখনও কারা থাকছে, সেটা স্পষ্ট। আমরা জানি আপনারা কারা। শিগগির আপনাদের মুখোশ উন্মোচিত হবে। আমরা প্রশাসনকে বলে দিতে চাই, দ্রুত ব্যবস্থা নিন। আমরা সেই সংগঠন যারা ফ্যাসিবাদের সময়েও একদিনের মধ্যে এমন ঘটনার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি।

Read Entire Article