সৌদি আরবের জেদ্দায় দুদিনব্যাপী আইপিএল নিলাম অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে গতকাল সোমবার। অনেক ক্রিকেটার নতুন ঠিকানা খুঁজে নিয়েছেন, অনেকে রয়ে গেছেন পুরোনো ডেরাতেই, নিলামে নাম দিয়ে অধিকাংশই ডুবেছেন হতাশার সাগরে।
সব মিলিয়ে গত দুই দিনে নিলাম থেকে মোট ১৮২ জন ক্রিকেটার কিনেছে ১০টি ফ্র্যাঞ্চাইজি। তাদের মধ্যে ১৮২ জন ভারতীয়। বিদেশি (অভারতীয়) খেলোয়াড় ৬২ জন। এসব খেলোয়াড় কেনায় খরচ করেছে মোট ৬৩৯.১৫ কোটি রুপি। আর অবিক্রীত থেকে গেছেন ৩৯৫ জন।
বাংলাদেশ থেকে নিলামের চূড়ান্ত তালিকায় নাম ছিল ১২ জনের। কিন্তু কেউই এবার দল পাননি। বাকি ১০ জনের কথা বাদ দিলেও সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে কিছুটা প্রত্যাশা ছিল ভক্তদের।
মোস্তাফিজের সঙ্গে নিলামে ডাকা হয়েছে রিশাদ হোসেনের নামও। তাদের কিনতে আগ্রহ দেখায়নি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। অন্যদিকে সাকিবের নামই ডাকা হয়নি।
বাংলাদেশিদের মধ্যে আইপিএলে খেলায় সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ সাকিব। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এই টুর্নামেন্টে দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে মোট ৯ মৌসুম খেলেছেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার। ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) হয়ে খেলেন ৭ মৌসুম। ২০১২ ও ২০১৪ সালে কলকাতাকে চ্যাম্পিয়ন করায় ভূমিকা রাখেন তিনি। সাকিব বাকি দুই মৌসুম খেলেছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে।
অন্যদিকে পেসার মোস্তাফিজের আইপিএলে অভিষেক ২০১৬ সালে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ৭ মৌসুম খেলেছেন এই বাঁহাতি। প্রথম দুই আসর খেলেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সিতে। এরপর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলেন তিনি।
২০২২ ও ২০২৩ মৌসুমে মোস্তাফিজ ছিলেন দিল্লি ক্যাপিটালসে। সর্বশেষ ২০২৪ আসরে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসে। ৯ ম্যাচে নেন ১৪ উইকেট।
এবার নিলামে দল পাননি সাকিব-মোস্তাফিজের মতো বেশকিছু বড় তারকা। দেখা নেওয়া যাক এই তালিকায় উল্লেখযোগ্য কারা আছেন-
ডেভিড ওয়ার্নার
আইপিএলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটার। ২০০৯ সাল থেকে সর্বশেষ ২০২৪ সালের আসর পর্যন্ত মোট খেলেছেন ১৮৪ ম্যাচ। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৫০+ (৬৬টি) রানের ইনিংস হাঁকানোর রেকর্ডও আছে অস্ট্রেলিয়ান এই ক্রিকেটারের। ৬ হাজার ৫৬৫ রান করে দখলে নিয়েছেন রানের হিসেবে ইতিহাসের সেরা চতুর্থ স্থান। এত অর্জন থাকলেও এবার দল পাননি ওয়ার্নার।
ওয়ার্নারের নাম দুবার তোলা হয়। প্রথমবার তুললে বিক্রি হননি। যে কারণে শেষ সময়ে আবারও তোলা হয়। দ্বিতীয়বারও অবিক্রীত থেকে যান অসি তারকা।
জনি বেয়ারেস্টো
ইংল্যান্ড ব্যাটার জনি বেয়ারেস্টো দল পাননি, এই খবর অবাকই করেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। মারকুটে এই ব্যাটারের সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে বেশি করতে না পারাটাই বোধহয় এক্ষেত্রে বিবেচিত হয়েছে।
আইপিএলে ৫ মৌসুমে মোট ৫০ ম্যাচ খেলেছেন বেয়ারেস্টো। গত মৌসুমে ১১ ম্যাচে রান করেছেন মাত্র ২৯৮। এর আগের মৌসুমে সমান ম্যাচে করেছিলেন ২৫৩ রান। বেয়ারেস্টোর কাছে হয়তো আরেকটু বেশি রান আশা করেছিলো দলগুলো। যে ইংলিশ ব্যাটারের বিকল্প বেছে নিয়েছে তারা।
কেন উইলিয়ামসন
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও গুজরাট টাইটানসের হয়ে মোট ১০ মৌসুম খেলেছেন কেন উইলিয়ামসন। সাবেক এই কিউই অধিনায়ক ১৮ ফিফটিতে করেছেন ২ হাজার ১২৮ রান। এবার ২ কোটি ভারতীয় রুপি ভিত্তিমূল্যে নাম নিবন্ধন করে দল পাননি তিনি।
দল না পাওয়ার পেছনে কারণ হতে পারে উইলিয়ামসনের স্ট্রাইকরেট। আইপিএল ক্যারিয়ারে ১২৫ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন ডানহাতি অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। চার-ছক্কার আইপিএলের সঙ্গে যা মানানসই নয়।
স্টিভ স্মিথ
অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার স্টিভ স্মিথ ২ কোটি ভিত্তিমূল্যে নাম নিবন্ধন করেছিলেন। দল পাননি। তারও দল না পাওয়ার কারণ হতে পারে স্ট্রাইকরেট। আইপিএলে ৯ মৌসুম খেলা এই ব্যাটারের স্ট্রাইকরেট ১৩০ এর কম।
দল না পাওয়া তারকাদের মধ্যে আরও আছেন- শার্দুল ঠাকুর, মায়াঙ্ক আগারওয়াল, ড্যারিল মিচেল, আদিল রশিদ, আলজারি জোসেফ, শাই হোপ, জেমস অ্যান্ডারসন, অ্যালেক্স কেরে।
এমএইচ/এমএস