সাজেকে ৫ ঘণ্টায় পুড়ে ছাই শতকোটি টাকার সম্পদ

4 hours ago 7
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি পর্যটন কেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সাজেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুনে পুড়ছে ৩৩টি রিসোর্ট-কটেজ, ২৭টি দোকান-রেস্টুরেন্ট, ৩৫টি বসতঘর (যার মধ্যে ১৯টি ত্রিপুরা ও ১৬টি লুসাই জনগোষ্ঠীর)। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনার সূত্রপাত অবকাশ ম্যানুয়েল রিসোর্টের শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। তবে অবকাশ রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী বিজয় ঘোষ জানিয়েছেন, স্থানীয় এক বাসিন্দার রান্না ঘরের আগুন থেকে আগুনের সূত্রপাত। তিনি জানান, ইকো ভিলেজ রিসোর্টের নিচে স্থানীয় একজনের বাড়ির রান্না ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত। যা পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বাড়িঘরে এবং সেখান থেকে রিসোর্ট কর্টেজে। সালকা রিসোর্ট থেকে অবশরা রিসোর্ট এবং আর্মি কর্টেজ থেকে ফেনী লুসাই কর্টেজ পর্যন্ত সব কর্টেজ রিসোর্ট পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার ৪টি রিসোর্ট পুড়ে গেছে। যার ক্ষতি প্রায় ৭ কোটি টাকা। এই ক্ষতি কীভাবে কাটিয়ে উঠবো বুঝতে পারছি না। সালকা রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী মো. ফয়সাল জানান, আমার সালকা রিসোর্টটি পুড়ে গেছে। এই আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শতকোটি টাকার কম নয়। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাবো যাতে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার যাতে সহযোগিতা করে। না হয় আমরা দাঁড়াতে পারবো না। ছাউনি রিসোর্টদের স্বত্বাধিকারী মো. ইমনারুল আলম জানান, আমাদের ছাউনি, আদ্রিকা, সবুজ ছায়া, লুসাই কর্টেজ সব পুড়ে গেছে। আমি এখন সাজেকে হাঁটছি গৃহহীন হয়ে। আমার এখন এখানে কোনো থাকার জায়গা নাই। আমার সব কর্টেজের ক্ষতি প্রায় আড়াই কৌটি। তিনি আরো বলেন, আমাদের অনেক আগে থেকে দাবি ছিল একটা ছোট ফায়ার স্টেশনের। কিন্তু সরকার এই বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। যদি ফায়ার স্টেশন থাকতো তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম হতো। সেই নিচের ছড়া থেকে পানি আনতে অনেক সময় লাগে। ততক্ষণে সব শেষ। আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবো কিনা, জানি না। পর্যটকরা নিরাপদে আছেন। অনেকে সাজেক ছেড়েছেন আবার অনেকে অন্য কর্টেজগুলোতে উঠেছেন। দুপুর ১টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হলে স্থানীয় লোকজন পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে ছিটানো হয় পানি। দুপুর ৩টার দিকে এক এক করে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি গিয়ে কাজ শুরু করে। প্রথম দীঘিনালা ফায়ার সার্ভিস পরে খাগড়াছড়ি সদর থেকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছে। ফলে বিকেল ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আগুন কিছু কিছু স্থানে জ্বলছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় রিসোর্ট মালিকরা। সাজেক ভ্যালি পাহাড় চূড়ায় হওয়ায় সেখানে পানির জোগান দেওয়া হয় ৫ কিলোমিটার নিচের একটি ছড়া থেকে। যার কারণে মূলত আগুন তার বীভৎসতা ছড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইন্দ্র ত্রিপুরা। তিনি আরো জানান, যদি সাজেকে পানির ব্যবস্থা থাকতো তাহলে আগুনের এই বীভৎসতা ছড়াতে পারতো না। আমরা এখানে স্থায়ীভাবে ফায়ার স্টেশন চাই। রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার) মো. মোবারক হোসেন কালবেলাকে জানান, আমি সাজেক যাচ্ছি, পথে রয়েছি। আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পর্যটকরা নিরাপদে আছেন। বাকিটা সেখানে গিয়ে বলতে পারবো। এদিকে পর্যটনকেন্দ্র রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর স্থানটিতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক হাবিব উল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সাজেকে পর্যটক গমন সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।
Read Entire Article