সাদপন্থিদের বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডের বিচারসহ ৪ দাবি
সাদপন্থিদের বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ড এবং টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আলেম-ওলামা ও মুসল্লিদের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একদল শিক্ষার্থী। ইজতেমায় হামলা ও নিহতের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিতসহ চার দফা দাবি জানান।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘সচেতন ছাত্রসমাজ’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে এসব দাবি জানানো হয়।
তাদের ৪ দফা দাবিগুলো হলো- অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতের বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ইতোমধ্যে যেসব চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও তাদের হুকুমদাতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেসব এজাহারভুক্ত আসামিদের আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে গ্রেপ্তার নিশ্চিত করতে হবে। তৎকালীন প্রশাসনের মদদপুষ্ট এই সাদপন্থিদের ২০১৮ সালে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয়ে তৎক্ষণাৎ গঠিত ভুঁইফোড় সংগঠন সচেতন ছাত্র সমাজের সদস্যদের অবিলম্বে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি, দিবাগত রাতে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে ঘুমন্ত নিরীহ আলেম-ওলামা ও সাধারণ মুসল্লিদের ওপর একটি বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক সংঘটিত এ হামলায় অন্তত চারশতাধিক মুসল্লি গুরুতর আহত হন। ২০২৪ সালের এই হামলা ২০১৮ সালের সাদপন্থিদের একই হামলার পুনরাবৃত্তি মাত্র।
তিনি বলেন, এসব সহিংস কার্যকলাপ শুধু ধর্মীয় পরিবেশকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, বরং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের ওপরও গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। আমরা সাদপন্থিদের এই বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ হামলা ও হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাতে চাই। অন্যথায়, বিচারব্যবস্থার প্রতি আমাদের আস্থা বিনষ্ট হলে দেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা হুমকির মুখে পড়বে।
জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাতে তাণ্ডবের মাধ্যমে সাদপন্থিদের এই ষড়যন্ত্র দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের কাছে উন্মোচিত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজলেও চিহ্নিত এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী শান্তির বার্তাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের পথ বেছে নিয়েছে। বিশেষ এই গোষ্ঠীর অনবরত এ উগ্রতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এ ছাড়া তিনি বলেন, হামলার আগের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সচেতন ছাত্র সমাজ’ নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। আমরা আশঙ্কা করছি, হামলার পেছনে এ সংগঠনটির সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই সংগঠনের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। এই সংগঠনের সদস্যদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান মোহাম্মদ ইয়াহয়া, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের শিক্ষার্থী শাকিল খান, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী শামীম হাসান ও শাহরিয়ার আলম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।