ফরিদপুরে নজর কাড়ছে সাদা শাপলার সৌন্দর্য। বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন খাল-বিল ও নিচু জমির জলাশয় শোভা পায় জাতীয় ফুল শাপলা। কিন্তু এক সময় সচরাচর দেখা মিললেও এখন সর্বত্র দেখা মেলে না। দিনদিন যেন হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন রঙের শাপলা আর বিল।
এক সময় গ্রামের মানুষ ও কিশোর-কিশোরীরা বিলঝিলে ও দোপে ডুব দিয়ে শালুক তুলে আনত। শাপলার শেকড়ের সঙ্গে যুক্ত শালুক সেদ্ধ করে খেয়ে জীবন বাঁচাতেন অনেকে। এখন গ্রামীণ অর্থনীতিও দ্রুত বদলাচ্ছে। মাটির নিচ থেকে শালুক তুলে খাওয়ার লোক তেমন চোখে পড়ে না। তবে অনেকে শাপলা ফুল সবজি হিসেবে রান্না করে খাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর শহর থেকে বাস কিংবা অটোতে করে ৮-১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ঠেনঠেনিয়া অথবা বালিয়াগট্টি বাজারে প্রথমে নামতে হয়। এখান থেকে পুনরায় অটোরিকশা বা ভ্যানে করে খোয়াড়গ্রামে গেলে দেখা মেলে শাপলা ফুলের এই মায়াবী সৌন্দর্য। আগের মতো বর্ষা হয় না। নদী-নালা, খাল-বিলে নেই তেমন পানি। পরিবেশ-প্রকৃতিতে এসেছে পরিবর্তন। তাই আগের মতো চোখে পড়ে না বিভিন্ন রঙের শাপলা ও শাপলার বিল। অথচ এক সময় ছিল দিগন্ত জোড়া শাপলার বিল মানুষের মন বিমোহিত করার পাশাপাশি শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন অনেক কৃষক।
দেখা যায়, সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের খোয়াড় গ্রামের বিল-জলাশয়ে ভাসমান সৌন্দর্য খচিত অসংখ্য সাদা শাপলা ফুল ফুটে রয়েছে। বর্ষার পানিতে সবুজ পাতার ওপর মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে সাদা শাপলা। আর এ সৌন্দর্য এক নজর দেখতে প্রতিদিন সকাল-বিকেলে ভিড় জমাচ্ছেন সৌন্দর্য প্রেমীরা। সাদা শাপলার বিলে ঘুরতে গিয়ে কেউ তুলছেন ছবি কেউবা সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
স্থানীয়রা জানান, এ গ্রামের মানুষ শাপলার ভাসমান ফুলের মধ্যদিয়ে ডিঙি নৌকা কিংবা তাল গাছের ডোঙা চালিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যান। যেতে যেতে অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করেন। কেউ কেউ হাত বাড়িয়ে তুলে নেয় দু-একটি শাপলা ফুল। দুরন্ত কিশোর-কিশোরীরা আবার নিজেরা ছোট নৌকা নিয়ে বের হয়ে পড়ে। নৌকার পাটাতন ভর্তি করে শাপলা নিয়ে বাড়ি ফেরে তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা হারুন অর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, আগের মতো বর্ষাও হয় না, শাপলাও দেখা যায় না। এখানকার বিলে সাদা শাপলা দেখতে, হাত দিয়ে স্পর্শ করতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় করছেন শতশত নারী-পুরুষ ও তরুণ-তরুণী। সৌন্দর্য উপভোগ করতে নৌকায় চড়ে সকাল-বিকেল আনন্দ উপভোগ করছেন।
সালথা উপজেলা সদরের বাসিন্দা বিধান মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, ‘উপজেলার ছোট একটি গ্রাম 'খোঁয়াড় গ্রাম'। যে গ্রামটির সৌন্দর্য বর্ষাকালে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে সাদ শাপলা ফুল। গ্রামের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের বর্ষার থইথই পানি আর সাথে সাদা শাপলা ফুল গ্রামটিকে এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য রূপে ধরা দিয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে একনজর দেখতে শত শত মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে ঘুরতে আসছেন।’
খোয়াড় গ্রামের বাসিন্দা মো. আবু মুসা বলেন, ‘সাদা শাপলার বিলে শুকনোর সময় প্রচুর পেঁয়াজ চাষ হয়, পেঁয়াজ শেষে পাটের চাষ করা হয়। আর এ ক্ষেতে প্রাকৃতিকভাবে প্রতি বছর বর্ষার সময় গজায় সাদা শাপলা ফুলের গাছ। আর এ মনোমুগ্ধকর পরিবেশে শাপলা ফুলের হাসি দেখতে আশপাশের এলাকার তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ প্রতিদিন সেখানে ভিড় জমায়।’
ফরিদপুর শহর থেকে ঘুরতে আসা মো. দাউদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভাদ্র-আশ্বিন মাস শরৎ কাল। শরৎ মানে নদীর তীরে কাশফুল, গাছে গাছে শিউলি, বেলি, জুঁই, শেফালি আর বিলে-ঝিলে শাপলা ফুলের সমারোহ। তবে সেই শাপলার সৌন্দর্য আগের মতো দেখা যায় না। পরিবার নিয়ে বিলে শাপলা ফুল দেখতে এসেছি। নৌকায় চড়ে সাদা শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। খুব ভালো লেগেছে।’
জানতে চাইলে সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার বলেন, ‘এ দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটে আসছে। আমরাও মাঝেমধ্যে ছুটির দিনে এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে যাই। শাপলা গ্রামের মানুষ সবজি হিসেবে খেতে খুব পছন্দ করে। ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে শাপলা ভাজি করে খেতে খুব মজা। এতে পুষ্টিগুণও আছে।
এনকেবি নয়ন/আরএইচ/জেআইএম