সাদা সোনার দাম কেন বেশি

3 days ago 6

সোনা অলঙ্কার তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে বহুকাল ধরেই। সোনার গয়না নারীদের কাছে আলাদা এক আবেগ। এটিকে একদিকে যেমন তারা সাজসজ্জায় ব্যবহার করছেন তেমনি গয়নার পরিমাণ তারা তাদের আভিজাত্যের অংশ বলেই মনে করেন। অনেকে আবার সোনার গয়না কেনা এক ধরনের ইনভেস্টমেন্ট বলেই ধরে নেন। বিপদের বন্ধু মনে করেন সোনাকে।

বর্তমানে হলুদ সোনার পাশাপাশি হোয়াইট গোল্ড বা সাদা সোনা বেশ জনপ্রিয় নারীদের কাছে। তবে শুধু একবিংশ শতাব্দীতেই নয়, ১৯শ শতকেও গয়নায় সাদা সোনা ব্যবহার হত। নারীদের জন্য তৈরি বিভিন্ন অলঙ্কারে সাদা সোনা ব্যবহার হতো।

সাদা সোনা বা হোয়াইট গোল্ড কী?

হোয়াইট গোল্ড হলো একটি অলয়, যা খাঁটি সোনার সঙ্গে একটি বা একাধিক সাদা-রঙের ধাতু মিশিয়ে তৈরি করা হয়-সাধারণত নিকেল বা পেলাডিয়াম, মাঝে মাঝে রূপা বা প্লাটিনামও ব্যবহার করা হয়। ২৪ কের খাঁটি সোনা স্বাভাবিকভাবে হলদেটে। লাল বা হলদেটে সোনাকে সাদা বা হালকা রূপে রূপান্তর করতে সাদা ধাতু মেশানো হয়-এটাই হোয়াইট গোল্ড।

সাদা সোনার দাম কেন বেশি

সাদা সোনা আসলে খাঁটি সোনা নয়। এটি হল খাঁটি সোনা + নিকেল/প্যালাডিয়াম/সিলভার/প্লাটিনাম এর সংমিশ্রণ। বাইরের দিকে সাধারণত রোডিয়াম প্লেটিং করা হয়, যাতে উজ্জ্বল সাদা আভা আসে। এবং দেখতে প্লাটিনামের মতো চকচকে ফিনিশিং আসে এবং স্ক্র্যাচ থেকে রক্ষা পায়।

কেন সাদা সোনার দাম বেশি?

দামের ব্যাপারে বলতে গেলে পরিবর্তনশীলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । খাঁটি সোনার পরিমাণ যত বেশি, তার দাম তত বেশি। তাই ১৮ ক্যারেট সোনার দাম ১৪ ক্যারেট সোনার চেয়ে বেশি এবং ১৪ ক্যারেট সোনার দাম ১০ ক্যারেট সোনার চেয়ে বেশি। তাছাড়া, সাদা সোনার দাম হলুদ সোনার চেয়ে অনেক বেশি, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

যেহেতু সাদা সোনা কোনো খনি থেকে আসে না। এটিকে আলাদা করেই তৈরি করতে হয়। ফলে এতে ব্যবহৃত ধাতু ও সমন্বয়ের খরচই মূলত এর দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে ব্যবহৃত পেলাডিয়াম বা রোডিয়াম হলো বিরল ও মুল্যবান ধাতু; সেগুলো ব্যবহার সোনার খরচ বাড়ায়।

এছাড়া আছে রোডিয়াম প্লেটিং ব্যয়। অতিরিক্ত প্রক্রিয়া-রোডিয়াম প্লেটিং এবং পরে পুনরায় করার প্রয়োজন ফিনিশ ধরে রাখতে। যা দাম বাড়াতে সহায়ক। এছাড়া প্রস্তুত প্রক্রিয়ার জটিলতা দাম বাড়িয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ। হোয়াইট গোল্ড তৈরিতে বেশি তীক্ষ্ম শৈল্পিকতা ও যত্ন লাগে, যা মূল্য-বৃদ্ধির কারণ।

তবে ১৮ ক্যারেট সাদা ও ১৮ ক্যারেট হলুদ সোনায় সোনার পরিমাণ একই হলেও প্লাটিনামের মতো ফিনিশ এবং রোডিয়াম স্তর যুক্ত হোয়াইট গোল্ড সাধারণত দামি হয়।

কোথায় বেশি ব্যবহৃত হয় সাদা সোনা?

সাদা সোনা আজ বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়, বিশেষ করে রত্ন সেটিং, বয়ন রিং ও এনগেজমেন্ট রিং-এ। তবে উৎপাদন বা খনির দিক থেকে সম্পূর্ণ সোনা-হোয়াইট গোল্ড তৈরি হয় যেসব দেশে গয়না শিল্প শক্তিশালী, যেমন ইউরোপ (জার্মানি, ফ্রান্স), যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত। হোয়াইট গোল্ডের আসলে কোনো নিজস্ব প্রাকৃতিক খনি নেই। এটি একটি শিল্প-নির্ভর প্রস্তুত পণ্য।

১৮২৩ সালে ঐতিহাসিক ফরাসি জুয়েলারি বই এল'আর্ট দ্যু বিজোউটিয়ার-এ লুইস-নিকোলাস ভাউকুইলিন সোনা ও প্লাটিনামের মিশ্রণ উল্লেখ করেছিলেন; এটিকে সাদা সোনার প্রাক ধারণা হিসেবে দেখা যায়। ১৯১২ সালে জার্মান রসায়নবিদ কার্ল লুইস উলম্যান হোয়াইট ধাতুর পেটেন্ট পেয়েছিলেন-গোল্ড, প্লাটিনাম, পেলাডিয়াম মিশ্রণে।

সাদা সোনার দাম কেন বেশি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্লাটিনামের অভাব ও নিষেধাজ্ঞার কারণে এটির জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। এমনকি ১৯শ শতকে যখন হোয়াইট গোল্ড জনপ্রিয় হতে থাকে, তখন অনেক মানুষকে প্রতারিত করা হয়েছিল। তারা ভেবেছিলেন এটা আসল প্লাটিনাম, কিন্তু আসলে সেটা ছিল হোয়াইট গোল্ড। ফলে অনেক জায়গায় আর্থিক ক্ষতির ঘটনাও ঘটেছে।

এছাড়া হোয়াইট গোল্ড তৈরিতে নিকেল ব্যবহার হতো, যা অনেকের ত্বকে অ্যালার্জি ও চামড়া ফুলে যাওয়ার সমস্যা তৈরি করে। এই কারণে ইউরোপের অনেক দেশে নিকেলযুক্ত হোয়াইট গোল্ড অলঙ্কার নিষিদ্ধ বা সীমিত হয়েছে।

আসল-নকল নিয়েও ছিল বিভ্রান্তি। অনেক সময় হোয়াইট গোল্ড আর প্ল্যাটিনাম প্রায় একই রকম দেখতে হওয়ায় ক্রেতারা বিভ্রান্ত হন। নকল বাজারে অনেক ক্ষেত্রে প্ল্যাটিনামের দামে হোয়াইট গোল্ড বিক্রি করে প্রতারণা করত ব্যবসায়ীরা।

সূত্র: ওরা জুয়েলস, ফ্রেন্ডলি ডায়মন্ড

কেএসকে/জিকেএস

Read Entire Article