সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোকে জাতীয় বীর ঘোষণা, উত্তাল ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার সাবেক স্বৈরশাসক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোকে জাতীয় বীর ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। এর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইন্দোনেশিয়া। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এটি ইতিহাস বিকৃতির এক স্পষ্ট প্রচেষ্টা এবং স্বৈরশাসনের অন্ধকার অধ্যায়কে ‘বৈধতা’ দেওয়ার চেষ্টা।
সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর সভাপতিত্বে এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে সুহার্তোকে এই মর্যাদা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সুহার্তোর মেয়ে সিতি হেদিয়াতি হারিয়াদি ও ছেলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মধ্য জাভা প্রদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি, স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক জেনারেল সুহার্তো স্বাধীনতার যুগ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
ইন্দোনেশিয়া ১৯৪৫ সালে নেদারল্যান্ডস ও জাপানের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। সুহার্তো তিন দশকেরও বেশি সময় ইন্দোনেশিয়া শাসন করেন। তার শাসনামলে ব্যাপক দুর্নীতি, সেন্সরশিপ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। ১৯৯৮ সালে অর্থনৈতিক সংকট ও গণবিক্ষোভের মুখে তাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। তিনি ২০০৬ সালে ৮৬ বছর বয়সে মারা যান।
প্রেসিডেন্ট প্রাবোও বিশেষ বাহিনীর সাবেক কমান্ডার ছিলেন। তিনি ১৯৯৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হন। তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থি কর্মীদের অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সংস্কৃতিমন্ত্রী ফাদলি জোন সুহার্তোর বীরত্ব নিয়ে বলেন, তিনি ১৯৪৯ সালে ডাচদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন, তাই তিনি জাতীয় বীরের মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। তিনি দাবি করেন, ১৯৬৫-৬৬ সালে অন্তত পাঁচ লাখ সন্দেহভাজন কমিউনিস্ট হত্যাকাণ্ডে সুহার্তো জড়িত ছিলেন না।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা এই সিদ্ধান্তকে ‘আজব ও নিন্দনীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্দোনেশিয়ার পরিচালক উসমান হামিদ বলেন, যিনি ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যার জন্য দায়ী, তাকে জাতীয় বীর ঘোষণা করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এটি ইতিহাস বিকৃতির নগ্ন উদাহরণ, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকারদের ন্যায়বিচারের দাবিকে উপেক্ষা করছে।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সরকার এ বিষয়ে কোনো তাৎক্ষণিক মন্তব্য জানায়নি।
এদিকে জাকার্তায় প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারী বিভিন্ন ব্যানার ও প্লেকার্ড প্রদর্শন করেছেন। এ সব ব্যানারে লেখা ছিল— মানুষ হত্যার জেনারেলকে মহিমান্বিত করা বন্ধ করো এবং হাজারো মানুষ মারা গেছে, কিন্তু দেশ ভুলে গেছে।

9 hours ago
3









English (US) ·