সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের প্রতিষ্ঠানে দুদকের হানা

2 hours ago 3
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ সময় সেখান থেকে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার মধ্যে ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের কালুরঘাট এলাকায় জাবেদের প্রতিষ্ঠান আরামিট পিএলসির কার্যালয়ের ড্রয়ার ও ভল্ট থেকে এসব নগদ অর্থ জব্দ করে দুদক। এর আগে একই দিন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করে দুদক। তিনি সম্প্রতি চারটি ব্যাংক থেকে ওই অর্থ তুলেছিলেন। দুদকের দাবি, এই টাকা নগদ করে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। দুদকের আইনজীবী মোকাররম হোসেন কালবেলাকে বলেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্বাক্ষর করা চেকগুলোর আসল কপিসহ জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করা হয়। প্রতিষ্ঠানের মালিক দেশে না থাকার সুযোগে অনুমতি ছাড়া টাকা তোলার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বুধবার বিকেলে নগদ অর্থ জব্দ হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আটক জাহাঙ্গীর এই বিপুল অর্থের উৎস ও গন্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দুদক সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহে ইসলামী ব্যাংকের কয়েকটি শাখা থেকে ১ কোটি, জনতা ব্যাংক থেকে ৩০ লাখ, সোনালী ব্যাংক থেকে ৩৬ লাখ এবং মেঘনা ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা তোলা হয়েছিল।  জাহাঙ্গীরের দাবি, ১৭ সেপ্টেম্বর অর্থ পাচারের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আরামিটের দুই এজিএম মো. আবদুল আজিজ ও উৎপল পালের আইনি লড়াইয়ের খরচের জন্য এই টাকা তোলা হয়। তবে দুদক মনে করছে, এই অর্থ উত্তোলনের সঙ্গেও আত্মসাৎ ও পাচারের যোগসূত্র রয়েছে। গত ২৪ জুলাই সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য ও আরামিট পিএলসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে দুদক মামলা করে। দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন। সেখানে সাবেক মন্ত্রী, তার স্ত্রী রুকমীলা জামান, ভাইবোন ও প্রতিষ্ঠানের আরও ৩১ জনকে আসামি করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হওয়া আরামিটের দুই কর্মকর্তা আবদুল আজিজ ও উৎপল পাল দুদকের কাছে স্বীকার করেন, সাইফুজ্জামানের নির্দেশে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে ২৫ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। তদন্তে দেখা যায়, জাবেদের মালিকানাধীন ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর হওয়ার পর তা একই ব্যাংকের চারটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করে বিদেশে পাচার করা হয়। এই জালিয়াতি ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটে ২০১৯-২০ সালে, যখন তিনি ভূমিমন্ত্রী ছিলেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর আদালত সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। এরপরও তারা বিদেশে চলে যান। দুদকের তথ্যমতে, জাবেদের নয়টি দেশে বিপুল সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, দুবাইয়ে ২২৮টি, যুক্তরাষ্ট্রে ১০টি বাড়ি এবং থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ একাধিক দেশে সম্পদ রয়েছে। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বসে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচারের মাধ্যমে জাবেদ ও তার পরিবার বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
Read Entire Article