সাবেক সচিবের গাড়িচালকের পুকুরে যেতে ৩১ লাখ টাকার সরকারি সেতু

10 hours ago 4

আশপাশে নেই ঘনবসতি। এরপরও খালের ওপর দাঁড়িয়ে আছে একটি কালভার্ট সেতু। মূলত একটি দপ্তরের সাবেক সচিবের গাড়িচালকের পুকুরে প্রবেশের জন্য সরকারি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই সেতুটি।

স্থানীয়রা বলছেন, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেতু নির্মাণ না করে ব্যক্তিস্বার্থে এমন সেতু নির্মাণ ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়। আর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, ওপর মহলের নির্দেশে বাধ্য হয়ে বাস্তবায়ন করতে হয়েছে এমন প্রকল্প।

জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, জেলার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (এমএসআরডিপি) আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডামুড্যা উপজেলার চরধানকাটি আদাসন দরবার শরীফ সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করে এলজিইডি। ৩১ লাখ ১২ হাজার টাকা চুক্তিমূল্য ধরে কালভার্ট নির্মাণের কাজটি শেষ করে মিনহাজ ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সাবেক সচিবের গাড়িচালকের পুকুরে যেতে ৩১ লাখ টাকার সরকারি সেতু

খোঁজ নিয়ে ও সরেজমিনে জানা যায়, ব্রিজটি যে স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে সেই স্থানে নেই কোনো বসতবাড়ি। খালের ওপাশে একটি মস্তবড় পুকুর। এমনকি পুকুরটির পাশ দিয়ে যাতায়াতের অন্য কোনো সড়কও নেই। তবে অদূর ভবিষ্যতে এই পুকুরপাড়ে বসতবাড়ি নির্মাণ করবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিবের গাড়িচালক মোকসেদ সরদার, তাই বিশেষ সুপারিশে এবং ক্ষমতাবলে বাস্তবায়ন করা হয়েছে এমন অবিশ্বাস্য প্রকল্প।

সরকারি টাকা নষ্ট করে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় ক্ষোভ স্থানীয়দের। মোহাম্মদ সুমন নামের এক স্থানীয় বলেন, ৩১ লাখ টাকা নষ্ট করে শুধু শুধু একটি ব্রিজ নির্মাণ করেছে। এই ব্রিজ দিয়ে কোনো লোকের যাতায়াত নেই, সামনে শুধু দুইটা পুকুর আছে। কোনো এক প্রভাবশালী লোক এটা করেছে। এক কথায় এটা অন্যায়। সরকারের টাকা যারা এভাবে নষ্ট করছে তাদের আমরা বিচার চাই।

আরও পড়ুন-
সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না কোটি টাকার ব্রিজ
৫ বছরেও শেষ হয়নি চারশো মিটার সেতু নির্মাণ
৬ বছর ধরে সাঁকো দিয়ে সেতু পারাপার

ইব্রাহিম মোড়ল নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এই ব্রিজটি সরকার যেখানে বানিয়েছে সেখানে ঘরবাড়ি নেই। সামনে একটা পুস্কুনি (পুকুর) আছে শুধু। অথচ একটু দূরেই খালের ওপারে ঘরবাড়ি আছে, সেখানে তারা সাঁকো ব্যবহার করছে। এই ব্রিজটি এমন স্থানে নির্মাণ করার দরকার ছিল, যেখানে সবাই এটার সুফল পাবে।

সাবেক সচিবের গাড়িচালকের পুকুরে যেতে ৩১ লাখ টাকার সরকারি সেতু

প্রতিবেদনের চিত্র সংগ্রহকালেই দেখা মেলে তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সেই গাড়িচালক মোকসেদ সরদারের। তবে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হলে একপ্রকার উত্তর না দিয়েই পালিয়ে যান। শুধু বলেন, ‘আমি এখানে বাড়ি নির্মাণ করবো।’

এদিকে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়টি খোলাসা করেন এলজিইডির ডামুড্যা উপজেলা প্রকৌশলী আবু নাঈম নাবিল। তার ভাষ্য, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে সুপারিশ করে সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন ওই গাড়িচালক।’

সাবেক সচিবের গাড়িচালকের পুকুরে যেতে ৩১ লাখ টাকার সরকারি সেতু

আবু নাঈম নাবিল বলেন, ‘আমরা উপজেলা থেকে এ ধরনের কোনো প্রপোজাল মন্ত্রণালয়ে পাঠাইনি। ওই গাড়িচালক সচিবকে দিয়ে তদবির করে কীভাবে যেন এটি ঢুকিয়েছে। পিডি চিঠি দিয়েছে এটি বাস্তবায়ন করার জন্য। আমরা পিডিকে জানিয়েছিলাম, এটি আমাদের প্রকল্পের মধ্যে পড়ে না। পরে পিডি নিজে ফোন দিয়েছে ও হেড অফিস থেকে জানানো হয়েছে এই কাজটি সম্পাদনের জন্য। আমি যেহেতু চাকরি করি, আমার কিছুই করার ছিল না।’

এদিকে এলজিইডির জেলা কর্মকর্তা বলছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে।

সাবেক সচিবের গাড়িচালকের পুকুরে যেতে ৩১ লাখ টাকার সরকারি সেতু

জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম বলেন, ব্যক্তিস্বার্থে কোনো ব্রিজ দেওয়া হয়নি। তারা তখন বলেছিলেন, এর পাশ দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ করে গ্রামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই প্রেক্ষিতে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে।

এর চেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গা ছিল, সেখানে কেন এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়নি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সরকারের কাজ করি, সেখানে জনপ্রতিনিধিরা যেভাবে চায় সেভাবে কাজ করতে হয়। তাদের প্রস্তাব আমাদের গ্রহণ করতে হয়।’

এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্রিজ নির্মাণস্থল পরিদর্শন ও যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের অবশ্যই দরকার আছে। আমরা তা করেছি। তবে তখন তারা আমাদের বলেছিল, ওইদিক দিয়ে একটি রাস্তা বের করে দেওয়া হবে।

এফএ/জেআইএম

Read Entire Article