বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকালে সাভারের তৎকালীন সংসদ সদস্য (এমপি) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে তার সশস্ত্র ক্যাডার ও পুলিশ বাহিনী একত্রিত হয়ে বাইপাইলে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়। এতে ২০-২৫ জন নিহত এবং অনেকেই আহত হন।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন বাইপাইলের ফল ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি আশুলিয়ায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছয়জনের লাশ পোড়ানো এবং ৪ আগস্ট একজনকে হত্যার ঘটনায় ৩০ আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সপ্তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দি গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। জবানবন্দি শেষে সাক্ষীকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন। এরপর মামলার কার্যক্রম বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ। অন্য প্রসিকিউটররা তাকে সহযোগিতা করেন।
আরও পড়ুন
সরাসরি সম্প্রচার হবে স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং অফিসারের জবানবন্দি
চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর
‘নিলিং পজিশনে গিয়ে গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবেন’
আশুলিয়ার বাইপাইল বাঘাবাড়ি বাজারে ফলের ব্যবসা করা শফিকুল জানান, তিনি ৪ ও ৫ আগস্ট বড় ভাই নাজমুলের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন। ৪ তারিখ ১০টা-১১টার দিকে বাইপাইল থেকে পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের দিকে মিছিল নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর দেখেন স্থানীয় এমপি সাইফুলের লোকজন ও ক্যাডার বাহিনী অবস্থান করছেন। তারা সেখান থেকে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন এবং বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। তখন আন্দোলনকারীরা বাইপাইলের দিকে ফেরত আসতে থাকেন। তখনও হামলাকারীরা তাদের দিকে গুলি ছুড়তে থাকে। দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত গুলি করা হয়। এতে এক আন্দোলনকারী মারা যান এবং অনেকে আহত হন।
শফিকুল বলেন, ‘৫ তারিখে আমরা বাইপাইল থেকে নবীনগরের দিকে যেতে থাকি। যাওয়ার পথে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় এমপি সাইফুল তার স্বশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী নিয়ে অবস্থান করে আমাদের ওপর গুলি ছোড়ে। তখন আনুমানিক দুপুর ১টা। সাইফুল এমপির সঙ্গে তার স্বশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী একত্রিত হয়ে বাইপাইল এলাকায় এসে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণ করে। এতে ২০-২৫ জন ছাত্র-জনতা নিহত এবং অনেকে আহত হয়। সেখানে আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করি।’
এ ঘটনার জন্য সাইফুল, আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), অন্য পুলিশ সদস্য ও সাইফুলের ক্যাডার বাহিনীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান শফিকুল।
এফএইচ/একিউএফ/এমএস